দ্বিতীয় খণ্ড - অষ্টাদশ অধ্যায়: তীর্থদর্শন ও হৃদয়রামের কথা
হৃদয়ের ৺দুর্গোৎসব
ঠাকুরের কথায় বিশ্বাস স্থাপন করিয়া হৃদয় এখন অনেকটা শান্তিলাভ করিলেও ঠাকুরবাটীর দৈনন্দিন কর্মসকল তাহার পূর্বের ন্যায় রুচিকর বোধ হইতে লাগিল না। তাহার মন নূতন কোন কর্ম করিয়া নবোল্লাস লাভ করিবার অনুসন্ধান করিতে লাগিল। সন ১২৭৫ সালের আশ্বিন মাস আগত দেখিয়া সে নিজ বাটীতে শারদীয়া পূজা করিতে মনস্থ করিল। হৃদয়রামের জ্যেষ্ঠ বৈমাত্রেয় ভ্রাতা গঙ্গানারায়ণের তখন মৃত্যু হইয়াছে, এবং রাঘব মথুরবাবুর জমিদারিতে খাজানা আদায়ের কর্মে বেশ দুই পয়সা উপার্জন করিতেছে। সময় ফিরায় বাটীতে নূতন চণ্ডীমণ্ডপখানি নির্মিত হইবার কালে গঙ্গানারায়ণ ইচ্ছা প্রকাশ করিয়াছিলেন, একবার ৺জগদম্বাকে আনিয়া তথায় বসাইবেন; কিন্তু সে ইচ্ছা পূর্ণ করিবার তাঁহার সুযোগ হয় নাই। হৃদয় তখন তাঁহার ঐ ইচ্ছা স্মরণপূর্বক উহা পূর্ণ করিতে যত্নপর হইল। কর্মী হৃদয়ের ঐ কার্যে শান্তিলাভের সম্ভাবনা বুঝিয়া ঠাকুর তাহাতে সম্মত হইলেন এবং মথুরবাবু হৃদয়ের ঐরূপ অভিপ্রায় জানিতে পারিয়া তাহাকে আর্থিক সাহায্য করিলেন। শ্রীযুক্ত মথুর ঐরূপে অর্থসাহায্য করিলেন বটে, কিন্তু পূজাকালে ঠাকুরকে নিজ বাটীতে রাখিবার জন্য বিশেষ আগ্রহ প্রকাশ করিতে লাগিলেন। হৃদয় তাহাতে ক্ষুণ্ণমনে পূজা করিবার জন্য একাকী দেশে যাইতে প্রস্তুত হইল। যাইবার কালে তাহাকে ক্ষুণ্ণ দেখিয়া ঠাকুর বলিয়াছিলেন, "তুই দুঃখ করিতেছিস কেন? আমি নিত্য সূক্ষ্ম শরীরে তোর পূজা দেখিতে যাইব, আমাকে অপর কেহ দেখিতে পাইবে না, কিন্তু তুই পাইবি। তুই অপর একজন ব্রাহ্মণকে তন্ত্রধারক রাখিয়া নিজে আপনার ভাবে পূজা করিস্ এবং একেবারে উপবাস না করিয়া মধ্যাহ্নে দুগ্ধ, গঙ্গাজল ও মিছরির শরবত পান করিস। ঐরূপে পূজা করিলে ৺জগদম্বা তোর পূজা নিশ্চয় গ্রহণ করিবেন।" ঐরূপে ঠাকুর, কাহার দ্বারা প্রতিমা গড়াইতে হইবে, কাহাকে তন্ত্রধারক করিতে হইবে, কিভাবে অন্য সকল কার্য করিতে হইবে - সকল কথা তন্ন তন্ন করিয়া তাহাকে বলিয়া দিলেন এবং সে মহানন্দে পূজা করিতে যাত্রা করিল।