দ্বিতীয় খণ্ড - বিংশ অধ্যায়: ৺ষোড়শী পূজা
ইতিপূর্বে ঠাকুরের ঐরূপ অনুষ্ঠান না করিবার কারণ
প্রশ্ন উঠিতে পারে - পত্নীকে সঙ্গে লইয়া দক্ষিণেশ্বরে আসিয়া তিনি ইতঃপূর্বেই তো ঐরূপ করিতে পারিতেন, ঐরূপ করেন নাই কেন? উত্তরে বলিতে হয় - সাধারণ মানব ঐরূপ করিত, সন্দেহ নাই; ঠাকুর ঐ শ্রেণীভুক্ত ছিলেন না বলিয়া ঐরূপ আচরণ করেন নাই। ঈশ্বরের প্রতি সম্পূর্ণ নির্ভর করিয়া যাঁহারা জীবনে প্রতিক্ষণ প্রতি কার্য করিতে অভ্যস্ত হইয়াছেন, তাঁহারা স্বয়ং মতলব আঁটিয়া কখনও কোন কার্যে অগ্রসর হন না। আত্মকল্যাণ বা অপরের কল্যাণসাধন করিতে তাঁহারা আমাদিগের ন্যায় পরিচ্ছিন্ন, ক্ষুদ্র বুদ্ধির সহায়তা না লইয়া শ্রীভগবানের বিরাট বুদ্ধির সহায়তা ও ইঙ্গিতের প্রতীক্ষা করিয়া থাকেন। সেজন্য স্বেচ্ছায় পরীক্ষা দিতে তাঁহারা সর্বথা পরাঙ্মুখ হন। কিন্তু বিরাটেচ্ছার অনুগামী হইয়া চলিতে চলিতে যদি কখনও পরীক্ষা দিবার কাল স্বতঃ উপস্থিত হয়, তবে তাঁহারা ঐ পরীক্ষা প্রদানের জন্য সানন্দে অগ্রসর হন। ঠাকুর স্বেচ্ছায় আপন ব্রহ্মবিজ্ঞানের গভীরতা পরীক্ষা করিতে অগ্রসর হয়েন নাই। কিন্তু যখন দেখিলেন পত্নী কামারপুকুরে তাঁহার সকাশে আগমন করিয়াছেন এবং তৎপ্রতি নিজ কর্তব্য প্রতিপালনে অগ্রসর হইলে তাঁহাকে ঐ বিষয়ে পরীক্ষা প্রদান করিতে হইবে, তখনই ঐ কার্যে প্রবৃত্ত হইয়াছিলেন। আবার ঈশ্বরেচ্ছায় ঐ অবসর চলিয়া যাইয়া যখন তাঁহাকে কলিকাতায় আগমনপূর্বক পত্নীর নিকট হইতে দূরে থাকিতে হইল, তখন তিনি ঐরূপ অবসর পুনরানয়নের জন্য স্বতঃপ্রবৃত্ত হইলেন না। শ্রীমতী মাতাঠাকুরানী যতদিন না স্বয়ং আসিয়া উপস্থিত হইলেন, ততদিন পর্যন্ত তাঁহাকে দক্ষিণেশ্বরে আনয়নের জন্য কিছুমাত্র চেষ্টা করিলেন না। সাধারণ বুদ্ধিসহায়ে আমরা ঠাকুরের আচরণের ঐরূপে সামঞ্জস্য করিতে পারি; তদ্ভিন্ন বলিতে পারি যে, যোগদৃষ্টিসহায়ে তিনি বিদিত হইয়াছিলেন, ঐরূপ করাই ঈশ্বরের অভিপ্রেত।