পঞ্চম খণ্ড - তৃতীয় অধ্যায়: নরেন্দ্রনাথের প্রথম আগমন ও পরিচয়
নরেন্দ্রের স্বাভাবিক ধ্যানানুরাগ
ধ্যানকেই নরেন্দ্রনাথ ঈশ্বরলাভের একমাত্র প্রশস্ত পথরূপে এই বয়সেই স্বতঃ ধারণা করিয়াছিলেন। উহা তাঁহার পূর্বসংস্কারজ জ্ঞান বলিয়া বেশ বুঝা যায়। তাঁহার বয়স যখন চারি-পাঁচ বৎসর হইবে তখন সীতারাম, মহাদেব প্রভৃতি দেবদেবীর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মৃন্ময়মূর্তিসকল বাজার হইতে ক্রয় করিয়া আনয়নপূর্বক পুষ্পাভরণে সজ্জিত করিয়া উহাদিগের সম্মুখে ধ্যানের ভানে চক্ষু মুদ্রিত করিয়া নিস্পন্দভাবে বসিয়া থাকিতেন এবং মধ্যে মধ্যে চাহিয়া দেখিতেন, ইতোমধ্যে তাঁহার মাথায় সুদীর্ঘ জটা লম্বিত হইয়া বৃক্ষাদির মূলের ন্যায় মৃত্তিকাভ্যন্তরে প্রবিষ্ট হইল কিনা - কারণ বাটীর বৃদ্ধা স্ত্রীলোকদিগের নিকটে তিনি শ্রবণ করিয়াছিলেন, ধ্যান করিতে করিতে মুনিঋষিদের মাথায় জটা হয় এবং উহা ঐপ্রকারে মাটির ভিতর নামিয়া যায়। তাঁহার পূজনীয়া মাতা বলিতেন, ঐ সময়ে এক দিবস নরেন্দ্রনাথ হরি নামক এক প্রতিবেশী বালকের সহিত সকলের অজ্ঞাতে বাটীর এক নিভৃত প্রদেশে প্রবিষ্ট হইয়া এত অধিক কাল ঐরূপ ধ্যানের ভানে বসিয়াছিলেন যে, সকলে বালকের অন্বেষণে চারিদিকে ধাবিত হইয়াছিল এবং ভাবিয়াছিল পথ হারাইয়া বালক কোথায় ঘুরিয়া বেড়াইতেছে। পরে বাটীর ঐ অংশ অর্গলবদ্ধ দেখিয়া একজন উহা ভাঙিয়া প্রবেশ করিয়া দেখে - বালক তখন নিস্পন্দভাবে বসিয়া রহিয়াছে। বাল্য-কল্পনা হইলেও উহা হইতে বুঝা যায় শ্রীযুত নরেন্দ্র কিরূপ অদ্ভুত সংস্কার লইয়া সংসারে জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন। সে যাহা হউক, আমরা যে সময়ের কথা বলিতেছি, সেই সময়ে তাঁহার আত্মীয়বর্গের প্রায় কেহই জানিতেন না যে, তিনি নিত্য ধ্যানাভ্যাস করিয়া থাকেন। কারণ রাত্রিতে সকলে শয়ন করিবার পরে গৃহ অর্গলবদ্ধ করিয়া তিনি ধ্যান করিতে বসিতেন এবং কখনও কখনও উহাতে এতদূর নিমগ্ন হইতেন যে, সমস্ত রাত্রি অতিবাহিত হইবার পরে তাঁহার ঐ বিষয়ের জ্ঞান হইত।