পঞ্চম খণ্ড - পঞ্চম অধ্যায়: ঠাকুরের অহেতুক ভালবাসা ও নরেন্দ্রনাথ
প্রথম দিবসে নরেন্দ্রকে ব্রহ্মজ্ঞ-পদবীতে আরূঢ় করাইবার ঠাকুরের চেষ্টা
নরেন্দ্রনাথ যেদিন দক্ষিণেশ্বরে একাকী আগমন করেন, ঠাকুর যে ঐদিন তাঁহাকে এককালে সমাধিস্থ করিয়া ব্রহ্মজ্ঞপদবীতে আরূঢ় করাইতে প্রবলভাবে আকৃষ্ট হইয়াছিলেন, এ বিষয়ে সংশয়মাত্র নাই। কারণ, উহার তিন-চারি বৎসর পরে শ্রীযুত নরেন্দ্র যখন সম্পূর্ণরূপে ঠাকুরের বশ্যতা স্বীকার করিয়াছিলেন এবং নির্বিকল্প সমাধিলাভের জন্য ঠাকুরের নিকট বারংবার প্রার্থনা করিতেছিলেন, তখন এই ঘটনার উল্লেখ করিয়া ঠাকুর তাঁহাকে আমাদিগের সম্মুখে অনেক সময় বলিতেন, "কেন? তুই যে তখন বলিয়াছিলি তোর বাপ-মা আছে, তাদের সেবা করিতে হইবে?" আবার কখনও বা বলিতেন, "দেখ, একজন মরিয়া ভূত হইয়াছিল। অনেককাল একাকী থাকায় সঙ্গীর অভাব অনুভব করিয়া সে চারিদিকে অন্বেষণ করিতে আরম্ভ করিল। কেহ কোন স্থানে মরিয়াছে শুনিলেই সে সেখানে ছুটিয়া যাইত। ভাবিত, এইবার বুঝি তার একজন সঙ্গী জুটিবে। কিন্তু দেখিত, মৃত ব্যক্তি গঙ্গাবারি-স্পর্শে বা অন্য কোন উপায়ে উদ্ধার হইয়া গিয়াছে। সুতরাং ক্ষুণ্ণমনে ফিরিয়া আসিয়া সে পুনরায় পূর্বের ন্যায় একাকী কালযাপন করিত। ঐরূপে সে ভূতের সঙ্গীর অভাব আর কিছুতেই ঘুচে নাই। আমারও ঠিক ঐরূপ দশা হইয়াছে। তোকে দেখিয়া ভাবিয়াছিলাম এইবার বুঝি আমার একটি সঙ্গী জুটিল - কিন্তু তুইও বলিলি, তোর বাপ-মা আছে। কাজেই আমার আর সঙ্গী পাওয়া হইল না!" ঐরূপে ঐ দিবসের ঘটনার উল্লেখ করিয়া ঠাকুর অতঃপর নরেন্দ্রনাথের সহিত অনেক সময় রঙ্গ-পরিহাস করিতেন।