Prev | Up | Next

পঞ্চম খণ্ড - ষষ্ঠ অধ্যায় - প্রথম পাদ: ঠাকুর ও নরেন্দ্রনাথের অলৌকিক সম্বন্ধ

নরেন্দ্রের অন্তর্নিহিত শক্তি সম্বন্ধে ঠাকুরের কথা

মহামনস্বী শ্রীযুত কেশবচন্দ্র সেন, শ্রীযুত বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী প্রভৃতি লব্ধপ্রতিষ্ঠ ব্রাহ্মনেতৃগণ ঠাকুরের সহিত সম্মিলিত হইয়া একদিন একত্র সমাসীন রহিয়াছেন। যুবক নরেন্দ্রও তথায় উপবিষ্ট আছেন। ঠাকুর ভাবমুখে অবস্থিত হইয়া প্রসন্নমনে কেশব ও বিজয়ের প্রতি দৃষ্টি করিতে লাগিলেন। পরে নরেন্দ্রনাথের প্রতি দৃষ্টি আকৃষ্ট হইবামাত্র তাহার ভাবী জীবনের উজ্জ্বল চিত্র তাঁহার মানসপটে সহসা অঙ্কিত হইয়া উঠিল এবং উহার সহিত কেশবপ্রমুখ ব্যক্তিদিগের পরিণত জীবনের তুলনা করিয়া তিনি পরম স্নেহে নরেন্দ্রনাথকে নিরীক্ষণ করিতে লাগিলেন। পরে সভাভঙ্গ হইলে বলিলেন, "দেখিলাম, কেশব যেরূপ একটা শক্তির বিশেষ উৎকর্ষে জগদ্বিখ্যাত হইয়াছে, নরেন্দ্রের ভিতর ঐরূপ আঠারটা শক্তি পূর্ণমাত্রায় বিদ্যমান! আবার দেখিলাম, কেশব ও বিজয়ের অন্তর দীপশিখার ন্যায় জ্ঞানালোকে উজ্জ্বল রহিয়াছে; পরে নরেন্দ্রের দিকে চাহিয়া দেখি, তাহার ভিতরের জ্ঞান-সূর্য উদিত হইয়া মায়া-মোহের লেশ পর্যন্ত তথা হইতে দূরীভূত করিয়াছে!" অন্তর্দৃষ্টিশূন্য দুর্বলচেতা মানব ঠাকুরের শ্রীমুখ হইতে ঐরূপ প্রশংসা লাভ করিলে, অহঙ্কারে স্ফীত হইয়া আত্মহারা হইয়া পড়িত। নরেন্দ্রের মনে কিন্তু উহাতে সম্পূর্ণ বিপরীত ফলের উদয় হইল। তাঁহার অলৌকিক অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন মন উহাতে আপনার ভিতরে ডুবিয়া যাইয়া, শ্রীযুত কেশব ও বিজয়ের অশেষ গুণরাজির সহিত নিজ তাৎকালিক মানসিক অবস্থার নিরপেক্ষ তুলনায় প্রবৃত্ত হইল, এবং আপনাকে ঐরূপ প্রশংসালাভের অযোগ্য দেখিয়া ঠাকুরের কথার তীব্র প্রতিবাদ করিয়া বলিয়া উঠিল - "মহাশয়, করেন কি? লোকে আপনার ঐরূপ কথা শুনিয়া আপনাকে উন্মাদ বলিয়া নিশ্চয় করিবে। কোথায় জগদ্বিখ্যাত কেশব ও মহামনা বিজয় এবং কোথায় আমার ন্যায় একটা নগণ্য স্কুলের ছোঁড়া! - আপনি তাঁহাদিগের সহিত আমার তুলনা করিয়া আর কখনও ঐরূপ কথাসকল বলিবেন না।" ঠাকুর উহাতে তাঁহার প্রতি সন্তুষ্ট হইয়া বলিয়াছিলেন, "কি করব রে, তুই কি ভাবিস আমি ঐরূপ বলিয়াছি, মা (শ্রীশ্রীজগদম্বা) আমাকে ঐরূপ দেখাইলেন, তাই বলিয়াছি; মা তো আমাকে সত্য ভিন্ন মিথ্যা কখনও দেখান নাই, তাই বলিয়াছি।"

Prev | Up | Next


Go to top