পঞ্চম খণ্ড - ষষ্ঠ অধ্যায় - প্রথম পাদ: ঠাকুর ও নরেন্দ্রনাথের অলৌকিক সম্বন্ধ
নরেন্দ্রের তর্কশক্তিতে মুগ্ধ হইয়া ঠাকুরের জগন্মাতাকে জিজ্ঞাসা
ঐরূপ বলিয়া শ্রীযুত নরেন্দ্র পাশ্চাত্য শারীর-বিজ্ঞানে স্বসংবেদ্য দর্শনসমূহ-সম্বন্ধে যেসকল অনুসন্ধান ও গবেষণা আছে এবং যেরূপে তাহাদিগকে ভ্রমসঙ্কুল বলিয়া প্রমাণিত করা হইয়াছে, সেইসকল বিষয় নানা দৃষ্টান্তসহায়ে ঠাকুরকে বুঝাইতে সময়ে সময়ে অগ্রসর হইতেন। ঠাকুরের মন যখন উচ্চ ভাবভূমিতে অবস্থান করিত, তখন নরেন্দ্রের ঐরূপ বাল-সুলভ চেষ্টাকে সত্যনিষ্ঠার পরিচায়কমাত্র ভাবিয়া তিনি তাহার উপর অধিকতর প্রসন্ন হইতেন। কিন্তু সাধারণ ভাবভূমিতে অবস্থানকালে নরেন্দ্রের তীক্ষ্ণ যুক্তিসকল ঠাকুরের বালকের ন্যায় স্বভাবসম্পন্ন সরল মনকে অভিভূত করিয়া কখনও কখনও বিষম ভাবাইয়া তুলিত। তখন মুগ্ধ হইয়া তিনি ভাবিতেন, 'তাইতো, কায়মনোবাক্যে সত্যপরায়ণ নরেন্দ্র তো মিথ্যা বলিবার লোক নহে; তাহার ন্যায় দৃঢ় সত্যনিষ্ঠ ব্যক্তিসকলের মনে সত্য ভিন্ন মিথ্যা সঙ্কল্পের উদয় হয় না, এ কথা শাস্ত্রেও আছে; তবে কি আমার দর্শনসমূহে ভ্রমসম্ভাবনা আছে?' আবার ভাবিতেন, 'কিন্তু আমি তো ইতঃপূর্বে নানারূপে পরীক্ষা করিয়া দেখিয়াছি, মা (শ্রীশ্রীজগদম্বা) আমাকে সত্য ভিন্ন মিথ্যা কখনও দেখান নাই এবং তাঁহার শ্রীমুখ হইতে বারংবার আশ্বাসও পাইয়াছি, তবে সত্যপ্রাণ নরেন্দ্র আমার দর্শনসকল মাথার খেয়ালে উপস্থিত হয়, এ কথা বলে কেন? - কেন তাহার মন বলিবামাত্র ঐসকলকে সত্য বলিয়া উপলব্ধি করে না?'
ঐরূপ ভাবনায় পতিত হইয়া মীমাংসার জন্য ঠাকুর অবশেষে শ্রীশ্রীজগদম্বাকে ঐ কথা জিজ্ঞাসা করিতেন এবং "ওর (নরেন্দ্রের) কথা শুনিস কেন? কিছুদিন পরে ও (নরেন্দ্র) সব কথা সত্য বলে মানবে" - তাঁহার শ্রীমুখ হইতে এইরূপ আশ্বাস-বাণী শুনিয়া তবে নিশ্চিন্ত হইতে পারিতেন। দৃষ্টান্তস্বরূপে এখানে একদিনের ঘটনার উল্লেখ করিলেই পাঠকের পূর্বোক্ত বিষয় হৃদয়ঙ্গম হইবে।