Prev | Up | Next

বন্দনা - গুরু-বন্দনা

জয় জয় রামকৃষ্ণ বাঞ্ছাকল্পতরু।
জয় জয় ভগবান জগতের গুরু॥
জয় হে অনাথ-নাথ পতিত-পাবন।
জয় জয় দীনবন্ধু অধমতারণ॥
কৃপাসিন্ধু দীনের ঠাকুর তুমি হরি।
শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস নামধারী॥
পতিতপাবন জয় অগতির গতি।
দীনশরণ হে তুমি দীনে রাখ প্রীতি॥
ভুবন-পাবন জয় ভক্ত-গলহার।
জগজন-তারক হারক-ভবভার॥
জয় হৃদি-রঞ্জক ভঞ্জক-ভব-ভয়।
করণ-কারণ-কর্তা হয় স্থিতি লয়॥
তুমি শিব তুমি শক্তি নারায়ণ তুমি।
তুমি রাম তুমি কৃষ্ণ অখিলের স্বামী॥
তুমিই সচ্চিদানন্দ পূর্ণব্রহ্ম হরি।
জয় জয় রামকৃষ্ণ নর-রূপধারী॥
নিরাকার সাকার সবার ঘটে স্থিতি।
জয় জয় রামকৃষ্ণ ব্রহ্মাণ্ডের পতি॥
বেদের অগম্য তুমি বেদের অপার।
জয় জয় রামকৃষ্ণ সর্বসারাৎসার॥
অনন্ত তোমার শক্তি লোকবোধাতীত।
না দেখালে কোন জনে না হয় প্রতীত॥
করুণাসাগর তুমি জীব-হিতকারী।
জয় জয় রামকৃষ্ণ দ্বিজবেশধারী॥
জয় প্রেম-ভক্তিদাতা অজ্ঞান-নিবারী।
জয় জয় রামকৃষ্ণ তিন-তাপ-হারী॥
সেবানন্দদাতা তুমি শুদ্ধবুদ্ধিদাতা।
জ্ঞানের জনক তুমি তুমি ভক্তি-মাতা॥
জীবদুঃখাতুর তুমি করুণা-নিদান।
অধমে অভয়পদে যেচে দাও স্থান॥
দুঃখী দাসে বড় বাস বিনা প্রয়োজনে।
দয়াল তোমার মত না দেখি ভুবনে॥
স্বার্থশূন্যে কর অন্যে কৃপারাশিদান।
দ্বিতীয় কে বল তব সম দয়াবান॥
শুন রে অবোধ মন কহি কর জুড়ি।
গাও রামকৃষ্ণনাম দিবা-বিভাবরী॥
থাক মন অভয়-কমল-পদে তাঁর।
উদ্ধারি আপনা কর আমায় উদ্ধার॥
জপ রামকৃষ্ণ রামকৃষ্ণনাম গাও।
তরিয়া আপনি আগে আমারে তরাও॥
ভজ পূজ রামকৃষ্ণ সেইরূপ ধ্যান।
তিনি সকলের সার এই কর জ্ঞান॥
ডাক রামকৃষ্ণে ছাড়ি কপট চাতুরী।
জীব-হিত-সদাব্রত ভবের কাণ্ডারী॥
ছি ছি মন ছাড় ছাড় কামিনী-কাঞ্চন।
অকিঞ্চিতে কেন কর বৃথা আকিঞ্চন॥
ছাড়ি পাদপদ্মে মধু কেন মর বুলে।
বিষময় সংসার-কাঁটার কিয়াফুলে॥
গেছে পাখা তবু শিক্ষা এখনও না হল।
মায়া-অন্ধ কিয়া-গন্ধ ভাবিছ কেবল॥
কিয়ারেণু তোর তনু সর্বাঙ্গ ব্যাপেছে।
কণ্ঠশ্বাস প্রাণে আশ আর কিবা আছে॥
কর না বারেক রামকৃষ্ণগুণগান।
নাহি কিছু রামকৃষ্ণনামের সমান॥
পতিতপাবন নাম গিয়াছেন রেখে।
দেখ ফল করে কিবা একবার ডেকে॥
অমৃত অপেক্ষা তাঁর নাম মিঠে লাগে।
মূর্তিমান হয়ে নাম হৃদয়েতে জাগে॥
নাহি কিছু রামকৃষ্ণনামের উপমা।
যে করেছে সে মজেছে তারে আছে জানা॥
একে যদি খায় মিষ্ট অন্যে নহে মজা।
অবিশ্বাসী হৃদয়ের ফলমাত্র সাজা॥
কোটিজন্মার্জিত পাপ হরে একেবারে।
কায়মনে যদি রামকৃষ্ণ-নাম করে॥
দয়াল ঠাকুর নিজে বলেছেন কথা।
তিনি দায়ী তাঁর নামে যাহার মমতা॥
ভাবাবেশে উল্লাসে আশ্বাসি উচ্চরবে।
পতিত-পাবন-নামে সকল সম্ভবে॥
পাপনাশ কিবা কথা সেবাভক্তি পায়।
উপায় যে ভাবে মাত্র রামকৃষ্ণ-পায়॥
যাগ যজ্ঞ জপ তপ না পায় সন্ধানে।
কি দেন ঠাকুর মোর নিলে তাঁর নামে॥
যে যা করে দেখ মন কি কাজ বিচারি।
গাও নাম রামকৃষ্ণ দিবা বিভাবরী॥
দু বাহু তুলিয়া গাও সরল পরাণে।
ত্যজ ব্যাজ লোক-লাজ সরম-ভরমে॥
নিষ্ঠামনে ইষ্টজনে কর সারাৎসার।
সর্বশ্রেষ্ঠ রামকৃষ্ণ ঠাকুর আমার॥
সাজাইতে বড় সাধ আমার অন্তরে।
নাহি অর্থ ধন-রত্ন সাজাতে তাঁহারে॥
স্বতই সুন্দর তিনি জন-মনোহর।
ভুবন-মোহন-মূর্তি সুন্দর-আকর॥
যেইমতে সাজাইত মুক্তা-লতাবনে।
দাম বসুদাম আদি সুবল শ্রীদামে॥
সুদীর্ঘ মুকুতা-হার মুকুতার চূড়া।
মুকুতা-বসন মুকুতার গুঞ্জবেড়া॥
মুকুতায় সাজাইত শ্রবণ-কুণ্ডলে।
মুকুতা-নূপুর দিত বাঁধি পদতলে॥
মুকুতার বালা করি পরাইত হাতে।
সাজাত মুকুতা দিয়া সাজিত যে মতে॥
মুকুতায় সাজাইত মোহন বাঁশরী।
সাজাইতে সেইমতে বড় সাধ করি॥
ভুবন সাজান যিনি সাজাইতে তাঁরে।
বামন হইয়া চাই চাঁদ ধরিবারে॥
যদ্যপি করিতে প্রভু কর্মকার জেতে।
বানাতাম সিংহাসন যেন আছে চিতে॥
করিয়া কায়স্থ মোর হাতে দিলে কাঠি।
দিবানিশি কাটি কাল কালি ঘাঁটি ঘাঁটি॥
পেটের জ্বালায় ঘুরি সাহেবের দ্বারে।
জনমের মত দুঃখ রহিল অন্তরে॥
সাজাইতে একমাত্র দিয়াছ চন্দন।
ইহাতে বানাব যত সব আভরণ॥
কমল সহস্রদল থরে থরে আনি।
মনোহর সিংহাসন বানাব অমনি॥
চন্দনের চূড়া চন্দনের মালা গলে।
কিবা শোভা মনোলোভা চন্দন-কুণ্ডলে॥
চন্দনের মুক্তালতা ঘেরা চারি ধারে।
চন্দনের গুঞ্জবেড়া মন-প্রাণ হরে॥
চন্দনের বানাইব বিচিত্র আসন।
পরাব তোমারে প্রভু চন্দন-বসন॥
নানা জাতি সুগন্ধি কুসুম আনি তুলি।
সাজাই ঠাকুর মোর প্রাণের পুতুলি॥
সুঘন দুধের ভোজ্য করিয়া যতনে।
বারে বারে দিতে ভোগ বড় হয় মনে॥
আরে মন সমর্পণ সব কর পদে।
প্রাণ মান আদি যত বৈভব সম্পদে॥
শুদ্ধ তারে সার কর জ্ঞান বুদ্ধি বল।
সম্পদ বিপদ সখা সহায় সম্বল॥
কেন মন অকারণ অনিত্য সংসারে।
বারে বারে মর ঘুরে ছাড়িয়া ঠাকুরে॥
ভাই বল বন্ধু বল কিবা সুত দারা।
স্বার্থপর সব নর সময়েতে তারা॥
এখনও সময় আছে কেন পাও কষ্ট।
বল মন সর্বক্ষণ হরে রামকৃষ্ট॥
অগণ্য প্রভুর ভক্ত ইষ্টগোষ্ঠী জান।
নাহিক আপন কেহ তাঁদের সমান॥
সযতনে দেখ মন ভক্তে রেখ প্রীতি।
আত্মীয়স্বজন তাঁরা তাঁরা বন্ধু জ্ঞাতি॥
ভক্তমধ্যে ছোট বড় জ্ঞান হয় ভ্রম।
সকলে আমার পূজ্য বুঝিবে এমন॥
ছোট বড় বিচারেতে নাহি অধিকার।
সকলে বুঝিবে রামকৃষ্ণ-পরিবার॥
রামকৃষ্ণ-ভক্তে বুঝি জীবন-মরণ।
ভাব মন দিবানিশি তাঁদের চরণ॥
গৃহস্থ সন্ন্যাসী ভক্ত এই দুই শ্রেণী।
সকলের পদ-রজে লুটাও অবনী॥

Prev | Up | Next


Go to top