Prev | Up | Next

বন্দনা - ভক্ত-বন্দনা

গললগ্ন-কৃতবাস ভক্তগণ-আগে।
সবার চরণরেণু অভাগিয়া মাগে॥
রামকৃষ্ণ-ভক্তসম নাহি কিছু আর।
যাদের হৃদয়-মধ্যে প্রভুর আগার॥
যাহা কিছু নাহি মিলে শাস্ত্র আলাপনে।
অনায়াসে হয় লভ্য ভক্ত দরশনে॥
ভক্তের অসাধ্য কিছু নাহিক সংসারে।
পঙ্গুরে করিলে দয়া লঙ্ঘে গিরিবরে॥
অন্ধেরে করিলে কৃপা দিব্যচক্ষু মিলে।
সুমধুর গুপ্ত খেলা দেখে কুতুহলে॥
শুষ্ক কাঠে যদি কৃপাকণা দান করে।
ফুলপত্র প্রসবিয়া তখনি মুঞ্জরে॥
আচোট পাষাণে যদি দেখে আঁখি মিলে।
দ্রবময়ী বারি হয়ে স্রোত বহি চলে॥
সুমূর্খ উপরে যদি দয়া উপজয়।
আগম নিগম বেদে হৃদয়ে উদয়॥
ভক্তি বলি যেই বস্তু ভক্তি-শাস্ত্রে বলে।
শাস্ত্র-অধ্যয়নে সেই ভক্তি নাহি মিলে॥
পঞ্জিকাতে যেন কত আড়া জল লেখা।
নিঙ্গুড়িলে পাঁজি নাহি বিন্দু যায় দেখা॥
সেইমত ভক্তি-শাস্ত্রে ভক্তি-বিবরণ।
আছেমাত্র নাহি মিলে ভকতি-রতন॥
সেই ভক্তিলাভ ভক্ত-সেবনেতে হয়।
সত্যাপেক্ষা অতি সত্য কহিনু নিশ্চয়॥
প্রভুপদ লভিতে যাহার আছে মন।
আগে ভজ শ্রীপ্রভুর ভকত-চরণ॥
ভক্তের মহিমা-গানে নাহিক শকতি।
সুমূর্খ পামর আমি হীন-বুদ্ধি-মতি॥
প্রভুভক্তসম পূজ্য আর কিবা আছে।
গুরুভক্ত-পদরজ অভাগিয়া যাচে॥
কৃপাবিন্দু ভক্তবৃন্দ কর মোরে দান।
অধমেরে যুগলচরণে দেহ স্থান॥
পদরজ বিনে মম গতি নাহি আর।
রজ-রত্ন দিয়া হবে করিতে উদ্ধার॥
আর এক মাগি ভিক্ষা তোমা সবা ঠাঁই।
দেহ শক্তি ঠাকুরের লীলা কিছু গাই॥
রামকৃষ্ণলীলাগানে বড় অভিলাষ।
কারণ তাহার নিম্নে করিনু প্রকাশ॥
শহরে চাকুরি করি পাড়াগাঁয়ে ঘর।
অন্নকষ্টহেতু চিরকাল দেশান্তর॥
বৎসরান্তে যদি কিছুদিন ছুটি পাই।
দেখিবারে সবে ঘরে দেশে চলে যাই॥
নাহি পেলে অবসর যাওয়া নাহি হয়।
স্নেহময়ী জননীর দুঃখ অতিশয়॥
শিন্নি মানসিক মাতা করে সত্যপীরে।
দিব পূজা সত্যপীর ছেলে এলে ঘরে॥
একবার ঘরে যবে জননী আমার।
হাঁড়ি হাঁড়ি মোয়ালাড়ু করি স্তূপাকার॥
পূজা দেন সত্যপীরে শুভবার তিথি।
পুরোহিত করে পাঠ সত্যপীর-পুঁথি॥
শুনিতে শুনিতে পুঁথি কেঁদে উঠে প্রাণী।
কেন সত্যপীর-পূজা কেন তায় শিন্নি॥
দয়াল ঠাকুর মোর পতিত-পাবন।
ক্ষণে ক্ষণে হৃদিমধ্যে হয় উদ্দীপন॥
সাধ এঁটে ফুটে উঠে অন্তর-ভিতরে।
রামকৃষ্ণ-ঠাকুরে পুঁথি পেলে পরে॥
হেনরূপে নিমন্ত্রিয়া যত গ্রামবাসী।
রাখিতাম প্রভু-প্রিয় জিলিপির রাশি॥
বসাইয়া সিংহাসনে ঠাকুর আমার।
চন্দনে সাজায়ে দিতু গলে ফুলহার॥
আনি তুলে শতদল-পদ্ম অগণন।
করিতাম চারিধারে কমল-কানন॥
আয়োজন নানা ভোজ্য যায় তাঁর প্রীতি।
আপনি করিতু পাঠ রামকৃষ্ণ-পুঁথি॥
এই উপজিল সাধ পুঁথি কিসে পাই।
বিষম সমস্যা পুঁথি লিখি শক্তি নাই॥
প্রভু-সম প্রভু-ভক্ত অতুল শকতি।
দয়ায় বানায়ে দেহ রামকৃষ্ণ-পুঁথি॥
আমার অতীত সাধ্য নাই বুদ্ধি বল।
তোমাদের পদরজ ভরসা সম্বল॥
কৃপাশক্তি দিয়া মোরে কর বলীয়ান।
যেন পারি করিবারে প্রভু-লীলা-গান॥
লিখি পুঁথি লোকখ্যাতি নাহি আশা মনে।
শুদ্ধমাত্র চাই পুঁথি পাঠের কারণে॥
দেহ রামকৃষ্ণ-ভক্তি আর পুঁথি তাঁর।
তোমাসবা প্রভু-ভক্তে প্রার্থনা আমার॥
নাহি চাই জপ তপ ধ্যান আচরণে।
সাযুজ্য সালোক্য আদি সামীপ্য নির্বাণে॥
নাহি চাই সিদ্ধাই ঐশ্বর্য আদি যত।
বিড়ম্বনা মাত্র বোধ নহে মনোমত॥
সাজাইব মনোমত ঠাকুরে আমার।
অবিরত রব রত সেবাতে তাঁহার॥
মনে মনে এই সাধ উঠে দিবারাতি।
তাই মাগি তোমা ঠাঁই রামকৃষ্ণ-পুঁথি॥

Prev | Up | Next


Go to top