প্রথম খণ্ড - পণ্ডিতগণের পরাভব
১
মাধুর্যের রসে পূর্ণ বাল্য-লীলা তাঁর।
গাইতে সে সব খুলে কি সাধ্য আমার॥
শুনিতে বাসনা যদি থাকে তোর মন।
এস দুইজনে করি তাঁহারে স্মরণ॥
বাঞ্ছাকল্পতরু তিনি, ভক্তজনে রটে।
যার যাহা হয় সাধ কৃপাবলে মিটে॥
জয় জয় দীননাথ কৃপার আকর।
জয় জয় শিশুরূপী প্রভু গদাধর॥
জয় যুগ-অবতার অন্ধের শরণ।
কৃপা করি কর মুক্ত দুখানি নয়ন॥
কাঠাকে পর্যন্ত বিদ্যা বাহ্যেতে আভাস।
অপার বিদ্যার তত্ত্ব খেলায় প্রকাশ॥
অদ্ভুত মহিমা-কথা শুন অতঃপর।
লিখিবারে দেহ শক্তি প্রভু গদাধর॥
জয় জয় সিদ্ধকাম সর্বসিদ্ধি-দাতা।
জয় সর্বশক্তিমান অনন্ত বিধাতা॥
গ্রামেতে বর্ধিষ্ণু গোষ্ঠী লাহা নামে খ্যাত।
নানা কাজে অর্থব্যয় প্রচুর করিত॥
একবার শ্রাদ্ধক্রিয়া তাঁহাদের ঘরে।
দেশের পণ্ডিত যত নিমন্ত্রণ করে॥
কোন টোল নাহি ফাঁক যে আছে যেখানে।
আবাহন করিলেন পত্রিকা-প্রেরণে॥
ঘটা পরিসীমা কিবা না হয় বর্ণন।
ছাত্রসহ দলে দলে পণ্ডিত ব্রাহ্মণ॥
আসিয়া করিল সভা নির্ধারিত দিনে।
যথাকালে বসিলেন শাস্ত্র-আলাপনে॥
কথার প্রসঙ্গে গোল উঠিল মহতী।
টোলের পণ্ডিতদের যে-প্রকার রীতি॥
হউন বা না হউন নিপুণ বিচারে।
প্রসারিয়া হস্তপদ গোলে মাত্র সারে॥
চতুর্দিকে রাষ্ট্র কথা হইয়াছে দেশে।
যথাদিনে লোকজনে দেখিবারে আসে॥
শুনি গোল উচ্চ রোল আসিয়া জুটিল।
মাঠে-ঘাটে কর্ম-কাজে যে যেথায় ছিল॥
সঙ্গী-সনে রঙ্গ করি শিশু-গদাধর।
উপনীত হইলেন সভার ভিতর॥
বিচার করেন সেই পণ্ডিতের দলে।
প্রসঙ্গের গূঢ় গ্রন্থি সব দেন খুলে॥
শাস্ত্রের নিগূঢ় তত্ত্ব বুঝা যাহা ভার।
তাহাই গদাই ল'য়ে করেন বিচার॥
বিচারের দেখি ধুম সবে একে একে।
আসিয়া বেড়িল শিশু-প্রভুকে চৌদিকে॥
সপ্তরথিমধ্যে যেন অভিমন্যু-রণ।
বিচারে আগুন ছুটে ন্যূন নাহি হন॥
বড়ই তাজ্জব কথা অপার বিস্ময়।
পণ্ডিত শিশুর কাছে পরাভব হয়॥
অল্পবয়স শিশু বুলে খেলে খেলে।
শাস্ত্রের নিগূঢ় মর্ম কেমনে বুঝিলে॥
নানা জনে নানারূপ বলাবলি করে।
অদ্ভুত শকতি দেখি শিশুর ভিতরে॥
একে ত সুন্দর শিশু বঙ্কিম নয়ন।
শ্রীবয়ানে মাখা কান্তি শোভা নিরুপম॥
লম্বমান শোভে বেণী শিরের উপরে।
পীযূষ-পূরিত কথা রসনায় ঝরে॥
আজানুলম্বিত বাহু-যুগ-প্রসারণে।
মহাদম্ভে শাস্ত্রালাপ ধীরগণ-সনে॥
অবাক্ হইয়া দেখে মহা অসম্ভব।
নিরক্ষর সুপণ্ডিত শাস্ত্রজ্ঞ শৈশব॥
জিজ্ঞাসা করেন শেষে শিশুবর কার।
এ হেন বয়সে করে শাস্ত্রের বিচার॥
যেসব পণ্ডিত শাস্ত্রে আগুয়ান দূর।
কহে আছে দৈবশক্তি নিশ্চয় শিশুর॥
পরিচিত-কাছে তাঁর পরিচয় পেয়ে।
সকলে আশিস্ করে আনন্দিত হ'য়ে॥
গ্রামবাসিমধ্যে কথা রাষ্ট্র হয় পরে।
পণ্ডিতমণ্ডলী আজি পরাস্ত বিচারে॥
গদাইর কাছে হৈল সবে পরাজয়।
কি আশ্চর্য কি আশ্চর্য সকলেতে কয়॥
আনন্দে উথলে হৃদি ছাড়িয়া আধার।
প্রাণের স্বরূপ গদাধর সবাকার॥
যে যেখানে ছিল ছুটে আসে দেখিবারে।
কি পুরুষ কিবা মেয়ে গ্রামের ভিতরে॥
বদন-চন্দ্রিমা হেরে তত্ত্ব যায় ভুলে।
মহৈশ্বর্য শ্রীপ্রভুর বালকের ছলে॥
ঐশ্বর্যে ঐশ্বর্যজ্ঞান নাহি এই দেশে।
মহানন্দে মুগ্ধ-চিত মাধুর্যের রসে॥
ভালবাসা মমতা কেবল বৃদ্ধি পায়।
মধুর খেলার ভিত্তি শৈশব-লীলায়॥
গোকুলনগরে যেন কৃষ্ণ-অবতারে।
আত্মহারা একমাত্র কৃষ্ণ-মুখ হেরে॥
অনুরূপে খেলা দেখি এখানেও তাই।
ঐশ্বর্য-বিষয়াদির গন্ধমাত্র নাই॥
একে ত শৈশব বয়ঃ প্রভুর আমার।
নয়ন বিনোদঠাম রূপের আগার॥
বিমোহন বাল্য-ভাব মাখা সর্ব গায়।
দেখামাত্র মনপ্রাণ তাহাতে ডুবায়॥
অপরূপ শিশু কব কি তাঁর কাহিনী।
অহরহঃ স্মর মন চরণ দু'খানি॥