প্রথম খণ্ড - পুঁথি-লিখন
১
জয় শিশু গদাধর, প্রভু পরম ঈশ্বর,
জয় জয় যত ভক্তগণ।
পদরজ সবাকার, মাগিতেছি বার বার,
ভক্তিহীন পামর অধম॥
ক্রমে প্রভু বয়োধিকে, সাঙ্গ কেবল কাঠাকে,
অল্প অল্প বর্ণ-পরিচয়।
কিন্তু হস্তলিপি তাঁর, গোটা গোটা দীর্ঘাকার,
পরিষ্কার হৈল অতিশয়॥
পাঠশালে বিদ্যার্জন, এই তক্ সমাপন,
উচ্চশিক্ষা নাই কোন কালে।
বংশের যেমন রীতি, ব্যাকরণ ন্যায় স্মৃতি,
শাস্ত্র-আদি শিক্ষা করা টোলে॥
শুন মন অতঃপর, কি করেন গদাধর,
পাঠশালা করি পরিত্যাগ।
রামকৃষ্ণায়ন-পুঁথি, লিখিবারে দিবারাতি,
অন্তরে জনমে অনুরাগ॥
এক পুঁথি লেখা তাঁর, দীর্ঘাক্ষরে চমৎকার,
দেখিয়াছি আপন নয়নে।
সুবাহুর পালা সেটি, লেখা অতি পরিপাটি,
হেলায় পড়িবে অন্ধজনে॥
সাঙ্গ দিন-নিরূপণ, বার শ ছাপ্পান্ন সন
ঊনবিংশ আষাঢ় মাহায়।
প্রার্থনা করিয়া রামে, রাখিতে তাঁরে কল্যাণে,
শ্রীপ্রভুর স্বাক্ষর তাহায়॥
কখন ভকতিভরে, পূজা হয় রঘুবীরে,
নানা ফুলে গাঁথি ফুলহার।
কভু উচ্চে রামনাম, গাইতেন অবিরাম,
প্রভুর অঙ্কুর সাধনার॥
রঙ্গ-রস-পরিহাসি, লয়ে যত প্রতিবাসী,
হাসিরাশি প্রকাশি বয়ানে।
শুনিতে কীর্তন যাত্রা, সঙ্গিসহ হয় যাত্রা,
পল্লীগ্রামে যা হয় সেখানে॥
অরুণ-উদয়-আগে, যেইরূপ পূর্বভাগে,
নানা রাগে রক্তিম বরণ।
জগৎ-লোচন রবি, কিরণ-আকর ছবি,
প্রায়াগত প্রকাশে লক্ষণ॥
বালক-বালার্ক-রূপ, তেমতি প্রভুর রূপ,
অপরূপ দিন দিন উঠে।
মর্মগ্রাহী সুচতুর, প্রতিবাসী শ্রীপ্রভুর,
সময় বুঝিয়া সঙ্গে জুটে॥
হয় কথা ইশারায়, অন্যে না বুঝিতে পায়,
বোবায় বোবায় যেন ভাষ।
শ্রীপ্রভুর নরলীলা, ধরায় বৈকুণ্ঠ-মেলা,
লেখনীতে না হয় প্রকাশ॥
এবে নিকটস্থ গ্রামে, গদাইঠাকুরে ক্রমে,
চিনিতে লাগিল লোকজন।
গদাই বুঝিয়া স্থান, গ্রাম গ্রামান্তরে যান,
বহুলোকে করে আবাহন॥
একে বয়ঃ সুকুমার, রূপ-লাবণ্য-আগার,
দীপ্তিমান বয়ান সুন্দর।
গুণটানা শরাসন, অল্প বাঁকা দু'নয়ন,
ত্রিভুবন-জন-মনোহর॥
প্রশস্ত কপোলতলে, সুদীর্ঘ কুন্তল খেলে,
মুখদ্যুতি অর্ধ-আবরণ।
শতগুণে শোভা বাড়ে, যখন জলদে ঘেরে,
শরতের চন্দ্রিমা-কিরণ॥
নাসা অতি পরিপাটি, রক্তিম অধর দুটি,
সুবিশাল বক্ষ মনোহর।
বাহুযুগ সুললিত, দুলে আজানুলম্বিত,
মধ্যদেশ বড়ই সুন্দর॥
কায়মত পদদ্বয়, ভকত-লালসালয়,
হৃদিরত্ন সেব্য কমলার।
সৌন্দর্যের ছবিখানি, কণ্ঠে ফুটে মিঠা বাণী,
মোহনত্ব নহে বলিবার॥
শ্যাম-শ্যামা-গুণগান, মধুর গদাই গান,
মনপ্রাণ মুগ্ধ যেই শুনে।
কভু না ভুলিতে পারে, থেকে থেকে মনে পড়ে,
কি ছিল জানি না কিবা গানে॥
গ্রামের রমণীগণ, গদাধরে মুগ্ধ মন,
রূপে গুণে তন্ময় সকলে।
হেরে তাঁরে সদা সাধ, দারুণ হৃদে বিষাদ,
সাধে বাদ জঞ্জাল ঘটিলে॥
প্রভুসঙ্গে তা' সবার, কি প্রকার ব্যবহার,
বলিবার কথা নহে মন।
ভিতরে সুন্দর কাণ্ড, কাঁচা মন লণ্ডভণ্ড,
সেইহেতু রাখিনু গোপন॥
আভাস সঙ্কেতে কই, মিষ্টিমাখা চিঁড়া-দই,
প্রভু বই নাহি জানে আর।
গোপনে অনেক নারী, গড়িয়ে দিত বাঁশরী,
ভাঙিয়া গায়ের অলঙ্কার॥
গুপ্তমুখ কুলবালা, গেঁথে দিত ফুলমালা,
যেন সাধ্য মিষ্ট ভোজ্য কিনে।
কেহ পুত্রনির্বিশেষে, গদাধরে ভালবাসে,
সমাদরে পরম যতনে॥
ভগবৎ-ভক্ত যারা, মহানন্দ পায় তারা,
শুনে কাছে ঈশ্বরপ্রসঙ্গ।
হাস্য-রস সকৌতুক, কিসে নহে পরাঙ্মুখ,
নানা রঙ্গ রসের তরঙ্গ॥
বাল্যাবধি শ্রীপ্রভুর, শুনিয়াছি যতদূর,
যাওয়া আসা ছিল নানা স্থানে।
বিশেষে শিয়ড় গ্রাম, যথা হৃদয়ের ধাম,
সম্পর্কেতে হৃদয় ভাগিনে॥
হৃদুসঙ্গে সম্মিলন, এবে হ'তে বিলক্ষণ,
সংঘটন হইল তাঁহার।
পরস্পর বড় প্রীতি, হৃদু ভাগ্যবান অতি,
পশ্চাৎ গাইব সমাচার॥