দ্বিতীয় খণ্ড - অনুরাগে কালীদর্শন
১৪
রানীর গুণের কথা না যায় বাখানি।
মথুরে কহিল তাঁয় ডাকাইয়া আনি॥
উপায়বিহীন দেখি কি করিবে কাজ।
চিকিৎসায় উপশম না হন ভট্চায॥
পরস্পর নানা কথা যুক্তি স্থির করি।
ভাগিনা হৃদয়ে কৈল শ্যামার পূজারী॥
প্রভুর বেতন মুসহারা সম গণি।
বন্ধনী করিয়া দিল ভক্তিমতী রানী॥
প্রভুদেবে রাখিলেন পরম যতনে।
সুন্দর বন্ধনী করি সেবার কারণে॥
রাধাশ্যাম আর যেন কালীঠাকুরানী।
তুল্যরূপে সেবি রাখে ভক্তিমতী রানী॥
প্রভুর কারণ দ্রব্য যখন যা লাগে।
যোগায় অমনি রানী সকলের আগে॥
আজ থেকে নিত্যকর্ম শ্যামা-পূজা গেল।
কিন্তু শ্যামা-অনুরাগ চৌগুণ বাড়িল॥
বরষায় রক্তপদ্ম যেন সরোবরে।
সেই মত রাঙা আঁখি ভাসে আঁখিনীরে॥
এতই ঝরিত বারি আঁখি-সরসিজে।
ধারায় ধরায় পড়ি মাটি যেত ভিজে॥
কত যে কান্দিলা প্রভু ধরি কলেবর।
ধরিতে পারিলে বারি হইত সাগর॥
শিশুর রগড় যেন মা'র অদর্শনে।
ধূলায় কাদায় লুটে ব্যাকুল পরাণে॥
মাতা বিনা অন্যে আর কিসেও না ভুলে।
সেইমত প্রভুদেব সুরধুনীকূলে॥
পদ্মদল হেরে হারে সুকোমল কায়।
দেখা দে মা কোথা বলি লুটালুটি যায়॥
গোটা দিন গত যবে সূর্য বসে পাটে।
জিহ্বা ধরি টানিতেন বিরহের চোটে॥
বলিতেন এল সূর্য পুনঃ ঘর গেল।
আমি যেন তাই শ্যামা আমার কি হ'ল॥
অসহ্য যাতনাপ্রদ শির-রোগ যার।
না জানে নিদানে কিবা আছে প্রতিকার॥
মস্তক লইয়া ব্যতিব্যস্ত অনুক্ষণ।
যন্ত্রণা-জ্বালায় করে জলে নিমগন॥
বিরহ-সন্তাপে সেইমত প্রভুরায়।
মগ্ন করিতেন মাথা গঙ্গার কাদায়॥
আর্তনাদে হিয়া-ভেদ পশে যার কানে।
সে বুঝে সেরূপ তাঁর পীড়ার বেদনে॥
দিনে দিনে দিন যায় ক্ষুধা-তৃষ্ণা নাই।
আত্মীয়-বান্ধব যত কাতর সবাই॥
খাওয়াইয়া দিলে পরে ধরাধরি ক'রে।
তবে কিছু যায় ভোজ্য উদর-ভিতরে॥
দিবানিশি সম ধারা একরূপে যায়।
কাঁদিয়া বেড়ান মাত্র ডাকিয়া শ্যামায়॥