দ্বিতীয় খণ্ড - অনুরাগে কালীদর্শন
১৬
আইল বরষা ধরি ভীষণ আকার।
মেঘে ঢাকে রবিকর দিন অন্ধকার॥
গভীর গর্জন সহ ঢালে জলরাশি।
নাহিক বিচার কিবা দিবা কিবা নিশি॥
উথলিল ভাগীরথী গেরুয়াবসনা।
জুয়ারে আনিল জলে সাগরের লোনা॥
ডুবাইল পঞ্চবটী সাধনার স্থল।
জুয়ারের কালে উঠে আধ হাত জল॥
প্রভুর অবস্থা কিবা কাদা কিবা মাটি।
যেখানে আবেশ সেইখানে লুটাপুটি॥
ঘটি ঘটি লোনা জল পেটে গিয়া পড়ে।
হইল এবারে পীড়া বিষম উদরে॥
পীড়িত বড়ই প্রভু পেটের পীড়ায়।
আত্মীয়েরা সঙ্গে লয়ে দেশে চলে যায়॥
নিরমল মিঠা জল দেশের পুকুরে।
কিছুদিন পানে গেল একেবারে সেরে॥
গ্রামবাসী-সঙ্গে ভাব পূর্বের ধরন।
কভু হাসিখুশী কভু রস-আলাপন॥
কখন নির্জনে যেথা লোকজন নাই।
অনেকে বুঝিল ক্ষেপা হয়েছে গদাই॥
গ্রামের পশ্চিমভাগে নহে বহুদূর।
চেতন জনম-ভিটা যথা শ্রীপ্রভুর॥
আছয়ে শ্মশান এক ভয়ঙ্কর স্থান।
শিয়রে ভূতির খাল ধীর বহমান॥
সন্ধ্যা হ'লে একা যেতে সাধ্য কার নাই।
সংগোপনে যাইতেন জগৎ-গোসাঁই॥
নিরজনে সাধনা করেন কুতূহলে।
ঝোপে সুবেষ্টিত এক বটবৃক্ষতলে॥
ঘোর অন্ধকার আছে তুলসীর বন।
তার ধারে করিতেন সাধনা-আসন॥
তুলসী-কানন করা শ্রীহস্তের তাঁর।
এখন তথায় আছে দুই চারি ঝাড়॥
বিবিধ সাধনা তথা হয় রাত্রিকালে।
দীপ্ দীপ্ দলে দলে ভূতে আলো জ্বালে॥
হাঁড়ি হাঁড়ি মিঠাই থাকিত সঙ্গে শুনি।
শূন্যে শূন্যে যেত উড়ে ঢালিলে অমনি॥
ক্রমশঃ পাইল টের ভাই রামেশ্বর।
শ্মশানে করেন কিবা গিয়া গদাধর॥
না মানেন কোন মানা কর্ম মনোমত।
মেজ ভাই সর্বদাই রহে সশঙ্কিত॥
রাত্রি গত প্রহরেক হইলেক পর।
দূরে থাকি ডাকিতেন ভাই রামেশ্বর॥
আয়রে গদাই এবে খাবার সময়।
কাছে যায় সাধ্য নাই অন্তরেতে ভয়॥
ভূতে পাছে করে তাড়া এই ভাবি মনে।
প্রভু বলিতেন দাদা এস না এখানে॥
প্রভুর অন্তরে নাই কোনই তরাস।
ক্রমে করিলেন পরে শ্মশানেতে বাস॥
শ্মশানের পোড়া কাঠ করি আহরণ।
না আসিয়া ঘরে হয় তথায় রন্ধন॥
লোকজন কাছে আসে দিনের বেলায়।
সাধনার কর্মে বাধা বড় লাগে তায়॥
সেইস্থান পরিহার করি তেকারণে।
চলিলেন আর এক দূরস্থ শ্মশানে॥
বুধইমোড়ল নাম অন্তর প্রান্তরে।
অনেক গ্রামের মড়া সেইখানে পুড়ে॥
ভীষণ শ্মশান লম্বা পূরব-পশ্চিমে।
দিনের বেলায় গেলে ভয় লাগে মনে॥
এইরূপে দেশে গিয়া করেন সাধনা।
জীবিত তথায় বাস লোক-মুখে শুনা॥