Prev | Up | Next

দ্বিতীয় খণ্ড - অনুরাগে কালীদর্শন

১৭

একদিন শ্রীপ্রভুর কি হইল মন।
ভাবেতে বিভোর গোটা দিন অনশন॥
সমাগত লোকজন বাড়ি পরিপূর্ণ।
বিষাদিত সকলেই শ্রীপ্রভুর জন্য॥
ভাগ্যবতী ভিক্ষামাতা ধনী কামারিনী।
প্রভুর ভাবের ভাব বুঝিতেন তিনি॥
সম্বোধিয়া সকলেই কহিল তখন।
গদা'য়ে খাওয়াতে কিবা কার আছে মন॥
সত্বর আনহ হেথা সংগ্ৰহ করিয়ে।
যা যার মনের সাধ লহ মিটাইয়ে॥
এত শুনি গৃহমুখে চলিল সকল।
কেহ মিষ্টি কেহ দুধ কেহ আনে ফল॥
যে যাহা পাইল তার মনের মতন।
সম্মুখে যোগায়ে দিল ত্বরিত গমন॥
মুখে তুলে দেয় দ্রব্য মনোমত যার।
ভাবাবেশে প্রভুদেব করেন আহার॥
কতই খাইলা প্রভু নাহি বাহ্যোদয়।
এখনও কে আছে বাকি ভিক্ষামাতা কয়॥
যে হও সে হও নাহি ভয় নাহি মানা।
আনিয়ে মিটায়ে লহ মনের বাসনা॥
একজন ছিল ডোম ভাবিয়া না পায়।
কি দ্রব্য আনিয়া দিবে প্রভুর সেবায়॥
একে অতি দীন দুঃখী তাহে হীন জেতে।
যায় গৃহ-অভিমুখে ভাবিতে ভাবিতে॥
একমাত্র কুঁড়েঘর সম্পত্তির সার।
কাঁঠালের গাছ আছে নিকটে তাহার॥
এতই ঘরের কাছে চালে ঠেকে ডাল।
দেখিল তাহাতে এক সুপক্ব কাঁঠাল॥
আনন্দের সীমা নাই মাথায় করিয়ে।
প্রভুকে খাইতে দিল কাঁঠাল আনিয়ে॥
দীনবন্ধু প্রভুদেব দীনের সম্বল।
উদর পূরিয়ে খান কাঁঠালের ফল॥
দীন-ভক্তদত্ত ফল করিলে ভক্ষণ।
তবে না আসিল অঙ্গে বাহ্যিক চেতন॥
কাঙাল-বৎসল প্রভু দীনের ঠাকুর।
পূরায়ে দীনের সাধ দুঃখ কৈলা দূর॥
শ্রীপ্রভু যাহার ফল খাইলা পিরীতে।
ডোমরূপী দেব তিনি উচ্চতম জেতে॥
দীনভাবে করে বাস গ্রাম-প্রান্তদেশে।
দুয়ারেতে দীনবন্ধু দরশন-আশে॥
যে হও সে হও তুমি আমার ঠাকুর।
পদধূলি দিয়া কর মোহ-তম দূর॥
জাতিতে কায়স্থ আমি তুমি জেতে ডোম।
তোমার তুলনে আমি অতি নীচতম॥
ভক্তিহীনে মাখায়েছি জাতিতে অখ্যাতি।
সেই জাতি মুখ্য তুমি যেই জাতি॥
কহিতে কাহিনী ব্যথা লাগে মোর বুকে।
আমার প্রদত্ত প্রভু নাহি দিলা মুখে॥
কি সুখের জাতি মম উচ্চ মাত্র নামে।
যাহারে করিলা ঘৃণা পতিতপাবনে॥
পতিত হইতে আমি সুপতিত অতি।
পদরেণু দিয়া মোর খণ্ডহ দুর্গতি॥
প্রভুর যে কুলে জন্ম জানি পরিচয়।
যাহার তাহার দ্রব্য গ্রহণীয় নয়॥
সে ধারা করিয়া নষ্ট প্রভু পরমেশে।
খাইলা সবার নষ্টা দুষ্টা নির্বিশেষে॥
পাছে কেহ করে প্রশ্ন কুলের উপর।
সে হেতু সন্ত্রস্তচিত্ত দাদা রামেশ্বর॥
বুঝিয়া দাদার ভাব শ্রীপ্রভু অন্তরে।
মানস করিলা ত্বরা আসিতে শিয়ড়ে॥

Prev | Up | Next


Go to top