Prev | Up | Next

দ্বিতীয় খণ্ড - রাসমণিকর্তৃক পরীক্ষা

জয় রামকৃষ্ণ নাম        অহেতুকী কৃপাধাম
প্রাণারাম পরাশান্তিদাতা।
অপার করুণাসিন্ধু        দুর্বল দীনের বন্ধু
পতিতপাবন ত্রাতা পাতা॥
জয় জগৎজননী        কৃপাময়ী নিস্তারিণী
ব্রাহ্মণ-নন্দিনী গুরুদারা।
জয় ইষ্ট-গোষ্ঠিগণ        শ্রীপ্রভুর প্রাণধন
অধমের করহ কিনারা॥
না চাই সিদ্ধাই বল        সপ্তদ্বীপ ধরাতল
প্রতিপত্তি সম্পত্তি ধরায়।
কর মোরে শক্তিদান        গাব প্রভু-লীলাগান
শুনে যেন মন ভুলে যায়॥
শুন শুন ওরে মন        মহাতম-বিনাশন
পরীক্ষা কখন অতি মিঠে।
ভক্তবাঞ্ছাকল্পতরু        শ্রীপ্রভু জগৎগুরু
যাহা দিলা ভক্তের নিকটে॥
বারে বারে শ্রীপ্রভুর        পরীক্ষা কৈল মথুর
রাসমণি শাশুড়ী এবারে।
আনিয়া রূপসী দুটি        সাজাইল পরিপাটি
নানাবিধ স্বর্ণ-অলঙ্কারে॥
মুনি-মন মুগ্ধ করে        বারেক আঁখিতে হেরে
পরমা সুন্দরী দুই জন।
রানীর সুযুক্তি-মতে        ধীরে ধীরে চলে রেতে
টলাইতে শ্রীপ্রভুর মন॥
এখানে পরীক্ষা-তরে        শ্রীপ্রভু শয়নাগারে
নিজভাবে পতিত শয্যায়।
কামিনী কুটিলমতি        মোহনীয়া জাল পাতি
হাবভাবে নিকটে দাঁড়ায়॥
রঙ্গ করি কথা কয়        রঙ্গিণী মোহিনীদ্বয়
নাহি ভয় পাষাণ-অন্তরে।
ক্রমে অগ্রসর হৈয়া        শ্রীঅঙ্গ পরশে গিয়া
শ্রীপ্রভুর শয্যার উপরে॥
অল্পবয়ঃ-শিশুপ্রায়        দেখিয়া বিকট কায়
শ্যামায় ডাকেন মহাত্রাসে।
বাহ্যহারা অচেতন        প্রভুদেব নারায়ণ
কামিনীর কলুষ পরশে॥
প্রভু-অঙ্গ-পরশনে        বারনারী দুইজনে
শুন কি হৈল অতঃপরে।
জনম-জনমার্জিত        পাপে তাপে বিনির্মুক্ত
দিব্যভাব উদয় অন্তরে॥
অভয় চরণ ধরি        ঢালে দুঁহে আঁখি-বারি
অনিবার বসি পদতলে।
হ'য়ে মহাকৃপাবান        উঠিলেন ভগবান
শ্রীবদনে শ্যামা শ্যামা ব'লে॥
দুঁহে নমস্কার করি        ত্রিতাপসন্তাপহারী
প্রভুদেব কল্যাণবিধান।
ভয়ে জড়সড়-কায়        বারনারী দুজনায়
করিলেন অভয় প্রদান॥
প্রভুর নাহিক রোষ        রূপে গুণে আশুতোষ
শত দোষ করিলে চরণে।
তখন মার্জনা তাঁর        দয়াময় অবতার
আগুসার ভূভার-হরণে॥
জীবের দেখিয়া দুখ        সদা বিদরিত বুক
অস্থির মরম-বেদনায়।
জ্বালায় যেতেন ছুটে        নির্জন গঙ্গার তটে
অন্ধকার বটের তলায়॥
শিবাগণ থেকে থেকে        যখন প্রহরে ডাকে
সেইসঙ্গে প্রভু নারায়ণ।
সম্বোধিয়া শ্যামা-মায়        প্রাণাকুল যাতনায়
করিতেন অশ্রু বিসর্জন॥
বলিতেন শ্যামা তুমি        জীবের জনম-ভূমি
জগৎজননী তব নাম।
পাপে রত জীব-প্রতি        কৃপা কর কৃপাবতী
কৃপা বিনা কি আছে কল্যাণ॥
হিতব্রত নিরবধি        অহেতুক কৃপানিধি
বিধির বিধানছাড়া দয়া।
আত্মসুখ-বিবর্জিত        সাধন-ভজনে রত
জীবহেতু মাত্র নর-কায়া॥
মজ মন মনসাধে        এমন প্রভুর পদে
হৃদয়রতন কমলার।
ভজ পূজ সেব তাঁয়        লুকায়ে রাখি হিয়ায়
ফলাফল না করি বিচার॥

Prev | Up | Next


Go to top