Prev | Up | Next

দ্বিতীয় খণ্ড - মধুরভাবে সাধনা

মধুরের এক রাই স্বত্বাধিকারিণী।
মহাভাবময়ী মহাভাব-স্বরূপিণী॥
যেই ভাব সেই কৃষ্ণ দুয়ে নহে আন।
একে দুই দুয়ে হয় একের সমান॥
ভাবশক্তি যেই বস্তু রাধা তাঁরে বলে।
শক্তির করুণা বিনা কৃষ্ণ নাহি মিলে॥
প্রভুদেব সেই হেতু জগৎ-শিক্ষায়।
সকলের অগ্রে ভজিলেন শ্যামা মায়॥
এখানে মধুরে সেই শক্তির সাধনা।
এক চিন্তা কিসে হয় রাধার করুণা॥
কোথা রাই কিসে পাই শ্যাম-সোহাগিনী।
মহাভাবময়ী মহাভাব-স্বরূপিণী॥
দিয়া দেখা কেনাদাসী কর অভাগীরে।
কিঙ্করী করুণাভিক্ষা মাগে সকাতরে॥
আবেগের বেগেতে করুণ নিবেদন।
কখন রাধার ধ্যানে গভীর মগন॥
পরে হৈল দরশন পূরিল কামনা।
কামগন্ধহীনা রাই কনকবরণা॥
পূতোজ্জ্বলা রাধারূপ নহে বর্ণিবার।
দেখিতে দেখিতে অঙ্গে মিশিল তাঁহার॥
নিজাঙ্গে শ্রীমতী রাই করিলে প্রবেশ।
শ্রীঅঙ্গেতে সমুদিত রাধার আবেশ॥
রাধাতে প্রভুতে আর ভিন্নভেদ নাই।
রাধাভাব-সাগরেতে নিমগ্ন গোসাঞি॥
সেই হাব সেই ভাব সেই চেষ্টাবলী।
রাগে প্রেমে ঠিক সেই শ্রীকৃষ্ণ-পাগলী॥
বিরহবিধুর ভাব শ্রীঅঙ্গে পূর্ণিত।
দৈহিক ক্রিয়ায় ঘোষে লক্ষণ বিহিত॥
প্রকৃতির ভাবে প্রভু এতই তন্ময়।
মাসে মাসে তিন দিন রজোদ্গম হয়॥
পুং-ইন্দ্রিয়ের উচ্চে দ্ব্যঙ্গুলি-প্রমাণ।
লোমকূপদ্বারে রক্তনির্গমের স্থান॥
বস্ত্রদুষ্টনিবারণে ভাবিয়া উপায়।
হৃদয় দিবসত্রয় কৌপীন পরায়॥
আশ্চর্য শ্রীপ্রভু যেন আশ্চর্যচরিত।
সখেদে কখন হয় বিরহের গীত॥
প্রিয়তমা অনুচরীরূপে সম্বোধিয়ে।
শিরে লগ্ন করদ্বয় কান্দিয়ে কান্দিয়ে॥
শ্যামের লাগাল যদি না পাইনু সই।
বল তবে কিবা সুখে ঘরে আর রই॥
শ্যাম যে আমার সই নয়নের তারা।
তিল-আধ না দেখিলে হই দিশেহারা॥
যদ্যপি হইত শ্যাম মস্তকের চুল।
বাঁধিতাম বেণী দিয়া বকুলের ফুল॥
সদা দরশন-সাধে বিকল পরানী।
ইতি উতি চাই যেন বনের হরিণী॥
এরূপে গাইতে গীত যায় বাহ্যজ্ঞান।
তন্ময় হইয়া ঘটে গভীর ধিয়ান॥
দেহের সঙ্কটাবস্থা পূর্বের সাধনে।
গিয়াছিল পুনরায় হয় বর্তমানে॥
কৃষ্ণ-দরশনাবেগ বাতিক পবন।
ধরিয়া প্রবল গতি অতীব ভীষণ॥
উঠিল প্রভুর হৃদি-আকাশের মাঝে।
আঁধারিয়া দশ দিশি আপনার তেজে॥
উলটপালট খায় দেহ-তরুবর।
প্রভুর নাহিক আর দেহের খবর॥

Prev | Up | Next


Go to top