দ্বিতীয় খণ্ড - মধুরভাবে সাধনা
১৫
প্রভুর চরণাম্বুজে পাইয়া আস্বাদ।
মনে মনে উঠে তাঁর উগ্রতর সাধ॥
তদাদিষ্ট সকলের মঙ্গল-কারণ।
যদ্যপি আড্ডায় হয় প্রভুর গমন॥
শ্রীচরণ-পরশনে স্থান হবে শুদ্ধ।
সাধন-ভজনে শিব মনোরথ সিদ্ধ॥
যথাবৎ মনোবাঞ্ছা কহে একদিন।
তখনি সম্মতি সায় দিলা ভক্তাধীন॥
যথাযোগ্য আয়োজন নির্ধারিত দিনে।
সসঙ্গ-বৈষ্ণব যাত্রা কাছির বাগানে॥
আড্ডা-মধ্যে রূপবতী সাধিকা বিস্তর।
ছোট বড় তর তম কমলনিকর॥
জগৎলোচন প্রভুদেবের উদয়ে।
হৃদিপদ্ম তাহাদের উঠে বিকশিয়ে॥
কমল সাধিকাদের হৃদয়কমল।
প্রফুল্লে তুলিল এক দিব্য পরিমল॥
আমোদিত গোটা আড্ডা দিব্যতম ভাবে।
নেহারে নয়ন ভরি দিনেশ শ্রীদেবে॥
যত বল সূর্যালোক এত অতি কাছে।
দেখিবারে দৃষ্টি শক্তিমান কেবা আছে॥
তদুত্তরে বলি শুন কিবা গূঢ় মর্ম।
প্রভু-দিনকরে ধরে মানিকের ধর্ম॥
দিনেশে দাহিকা-শক্তি প্রবল কেবল।
মানিক-আলোক হৃদি আঁখি সুশীতল॥
তদুপরি দিব্য ছটা বদনে বিকাশে।
ভগবৎ-প্রেমোদ্ভূত ভাবের আবেশে॥
ভাবে ভরা বাহ্যহারা মুদিত নয়ন।
অদৃষ্ট অশ্রুতপূর্ব অপূর্ব দর্শন॥
দেহ মন প্রাণখানি কতই বিকল।
আঁকিবারে চিত্রখানি ঠিক অবিকল॥
অক্ষমে হাঁপিয়া মরি এত মহা দায়।
যদিও প্রাণেতে ছবি না আসে ভাষায়॥
ইন্দ্রিয়বিজয়ী প্রভু দেখি পরীক্ষায়।
অটুট সহজ বলি বুঝিল তাঁহায়॥
কর্তাভজা মতে পথে সিদ্ধ যেই জনা।
অটুট সহজ নামে হন খ্যাতনামা॥
দেহাধারে অধিষ্ঠান আলেক আপনি।
শিষ্য-মধ্যে গুরুভাবে পূজনীয় তিনি॥
তাই তারা নিজ নিজ কল্যাণের আশে।
কেহ বা ইন্দ্রিয় কেহ পদাঙ্গুলি চুষে॥
কেহ বা চরণতলে লুটালুটি যায়।
মনোরথ-পূর্ণ-হেতু কৃপা ভিক্ষা চায়॥
আবেশস্থ প্রভুদেব বাহ্য কিছু নাই।
অত্যাশ্চর্য অদ্ভুত জগৎ-গোসাঁই॥
সবার ঠাকুর প্রভু ব্রহ্ম সনাতন।
সকলে চরণ পায় যে চায় চরণ॥
রামকৃষ্ণ অবতার পরম দয়াল।
হইলেও অতি ক্ষুদ্র সে পায় নাগাল॥
ফল-ভারে বৃক্ষ যেন নীচে নেমে পড়ে।
সেইমত প্রভুদেব করুণার ভারে॥
ঢালিয়া কৃপার ধারা সাধকের দলে।
ফিরিলেন সেই দিন আপনার স্থলে॥
শ্রীপ্রভু অপেক্ষা তাঁর করুণার বল।
যাহায় করেছে তাঁয় পুকুরের জল॥
অতি সোজা অনায়াসে সহজেই মিলে।
উদয় গোলোকচন্দ্র এখন ভূতলে॥
দলে দলে মধুলুব্ধ মধুপের প্রায়।
মহামত্ত গোটা কর্তাভজা-সম্প্রদায়॥
নানান অবস্থা-ভুক্ত পুরুষ রমণী।
দক্ষিণশহরে করে নিত্যই মেলানি॥
সাজাইয়া ফুলহারে মনের মতন।
মাঝে রাখি প্রভুদেবে করিত বেষ্টন॥
এ হেন সময় আর এক কথা শুনি।
গুপ্তমুখী কত শত কুলের কামিনী॥
মিষ্টিসহ মিঠা ফল আনিয়া গোপনে।
পরম সোহাগে দিত প্রভুর বদনে॥
পরিপক্ব হ'লে ফল গাছেতে যেমন।
বিবিধ স্বভাবযুক্ত বিবিধ বরণ॥
অগণন বিহঙ্গম বাসা দূরদেশে।
পাইয়া ফুলের গন্ধ ফল খেতে আসে॥
যেমন উদর যার সেইমত খায়।
ক্ষুধা মিটাইয়া পরে স্ববাসে পালায়॥
ঠিক তাই নানা সম্প্রদায়ভুক্ত দল।
প্রভু-বাঞ্ছাকল্পগাছে খায় পাকা ফল॥
এক গাছে যত ফল একই রকম।
সমান আকার বর্ণ এক আস্বাদন॥
সব বিহঙ্গম তৃপ্তি নাহি পায় তায়।
বিজাতীয় ফল দেখি স্থানান্তরে যায়॥
কল্পগাছ তেন নয় এক গাছ বটে।
ভিন্ন ভিন্ন ফল তার ভিন্ন ভিন্ন বটে॥
নানা আস্বাদন নানা মিষ্টরসে ভরা।
এক জাতি কত শত কে করে কিনারা॥
কোন্ পাখী কটা খাবে পেটে কত বল।
কল্পবৃক্ষ প্রভু তাঁয় ধরে নানা ফল॥
কখন সাধনা কিবা কৈলা ভগবান।
কেহ নাহি জানে তার সঠিক সন্ধান॥
মানুষে বুঝিতে নারে প্রভুর সাধনা।
স্বচক্ষে যাহার দেখা সেও যেন কানা॥
বাউল প্রভৃতি নবরসিকের মত।
ভগবানে যাইবারে যত রূপ পথ॥
সকলবিদিত প্রভু আদি থেকে অন্ত।
গোকুলে আরম্ভ শেষ লইয়া বেদান্ত॥
শুনিয়াছি সাধা তাঁর অগণ্য সাধন।
নিজে যেন গুপ্ত তেন সাধনা গোপন॥
ঊনিশ রকম ভাব শ্রীঅঙ্গে খেলিত।
শাস্ত্র ল'য়ে মিলাইয়া ব্রাহ্মণী দেখিত॥