প্রথম খণ্ড - অতিথির বেশধারণ ও ঐশ্বর্য-প্রদর্শন
১
শুন মন সুমধুর প্রভু-বাল্যলীলা।
শিশুরূপী ভগবান যে প্রকারে খেলা॥
করিলেন কামারপুকুরবাসী-সনে।
শুন শুন শুন মন শুন এক মনে॥
আর কত গ্রামের বালক সঙ্গে জুটে।
নানামত করে খেলা ঘরে পথে মাঠে॥
দেশদশা অনুসারে আই ঠাকুরানী।
মনোমত করি বেশ সাজান বাছনি॥
লাহাদের ছিল বড় অতিথি সেবন।
আসিত যাইত কত শত সাধুজন॥
অতিথি-সেবার শালা ছিল যেইখানে।
গদাইর প্রীতি বড় যাইতে সেখানে॥
কখনও একাকী কভু সঙ্গিগণ-সঙ্গে।
ভজন ভোজন আদি দেখিতেন রঙ্গে॥
ভোজন-সময় অতিথিরা অতি প্রীতে।
ঠাকুরপ্রসাদ দিত গদা'য়ের হাতে॥
মহাপ্রেমে গদাধর লইয়া প্রসাদ।
সঙ্গীসহ খাইতেন পরম আহ্লাদ॥
একদিন নববস্ত্র ঠাকুরানী আই।
পরাইয়া সাজাইলা প্রাণের গদাই॥
আনন্দ অন্তর যেন বালকের রীতি।
আসি উপনীত হৈলা যথায় অতিথি॥
ডোরকপ্নি-পরা দেখি যত সাধুজনে।
সে বেশ লাগিল বড় গদা'য়ের মনে॥
যেন মনে হৈল সাধ কৌপীন পরিতে।
নববস্ত্র খণ্ড খণ্ড করিয়া ত্বরিতে॥
অখণ্ড ব্রহ্মাণ্ডেশ্বর সেই খণ্ড লয়ে।
ডোরকপ্নি পরিলেন আনন্দিত হ'য়ে॥
কৌপীন পরিয়া আনন্দের সীমা নাই।
নেচে নেচে সমাগত জননীর ঠাঁই॥
কহেন মায়ের আগে নাচিয়া নাচিয়া।
অতিথি হয়েছি মাগো দেখ না চাহিয়া॥
জননী দেখেন সেই নববস্ত্রখানি।
ছিঁড়িয়া পরেছে নিজে এ ডোর-কৌপীনি॥
আরে অভাগীর বাছা কি কাজ করিলি।
এমন করিতে বাপ বুদ্ধি কোথা পেলি॥
বস্ত্র ছিঁড়ি কৌপীন করিতে কে শিখালে।
বলিতে বলিতে আই লইলেন কোলে॥
সন্ন্যাসীর বেশ অঙ্গে দেখিয়া নয়নে।
শেলের সমান লাগে জননীর প্রাণে॥
শ্রাবণের ধারা জিনি চোখে ঝরে জল।
অনিমিখ্ চোখে দেখে বদন-কমল॥
হেনকালে খেলার যতেক সঙ্গী ডাকে।
তাড়াতাড়ি নামিলেন মা'র কোল থেকে॥
নাচিয়া নাচিয়া মিলে তা' সবার সনে।
নানা রঙ্গে হয় খেলা বাড়ির প্রাঙ্গণে॥
খেলিতে দেখিয়া আই ভুলিলা সকল।
মোহ দিয়া ভগবান কি করেছে কল॥