প্রথম খণ্ড - রঘুবীরের মালাগ্রহণ
১
শ্রীপ্রভুর বাল্য-খেলা অতি সুললিত।
গাহিলে শুনিলে প্রাণ অতি প্রফুল্লিত॥
বিশ্বাস-আকর কথা শ্রীপদে তাঁহার।
গাব দেহ শক্তি প্রভু শক্তির আগার॥
একদিন দেখিলেন জনক তাঁহার।
অনুরাগে গাঁথে প্রাতে দিব্য-ফুলহার॥
চন্দন কুসুম কত আয়োজন করে।
পূজিবারে রঘুবীর শালগ্রাম ঘরে॥
পরম সুঠাম শিলা রূপের পুতলি।
শুন মন এ শিলার কথা কিছু বলি॥
কর্ম-প্রয়োজনে একবার দ্বিজবর।
চলেন মেদিনীপুর দূরস্থ শহর॥
দু'তিন দিনের পথ পশ্চিম-দক্ষিণে।
কর্ম করে তথা এক তাঁহার ভাগিনে॥
প্রথম দিবস গেল দ্বিতীয় আইলে।
বসিলেন ক্লান্তকায় এক বৃক্ষমূলে॥
অলসে অবশ তনু করিলা শয়ন।
অজ্ঞাতে অজ্ঞাতে তাঁর নিদ্রা-আকর্ষণ॥
দেখেন আশ্চর্য কথা স্বপ্নে দ্বিজবর।
এক নবদূর্বাদল-বর্ণ কলেবর॥
সুঠাম কুমার-বয়ঃ হাতে ধনুর্বাণ।
শিরেতে সুন্দর জটা দুলে লম্বমান॥
কহিলেন দ্বিজবরে কাকুতি করিয়া।
দেখ এক সাধু মোরে গিয়াছে ফেলিয়া॥
মাটির ভিতর আমি আছি ধানক্ষেতে।
দিনান্তেও একবার নাহি পাই খেতে॥
লইয়া চল না তুমি আপন ভবন।
যাইতে তোমার সঙ্গে বড় মম মন॥
ব্রাহ্মণ বলেন বাছা কি কহ আমায়।
গরীব কি আছে দিব খাইতে তোমায়॥
শুনিয়া কুমার কহে কিছু নাহি চাই।
যদি নিতি নিতি দুটি দুটি অন্ন পাই॥
নিদ্রাভঙ্গে দ্বিজবর উঠিলা চমকি।
এবা কিবা অপরূপ স্বপনেতে দেখি॥
সাত-পাঁচ ভাবি দ্বিজ ধানক্ষেতে যান।
খুঁজেন আগোটা ক্ষেত না পান সন্ধান॥
হতাশ হইয়া পরে ভাবে মনে মন।
খুঁজিনু ক্ষেতেতে যেন দেখিনু স্বপন॥
মিথ্যা কি এ সত্য কথা পুনঃ নিদ্রা যাব।
সত্য হ'লে পুনরায় দেখিতে পাইব॥
এত ভাবি দ্বিজবর করিলা শয়ন।
পূর্ববৎ কুমারের দেখেন স্বপন॥
কুমার বলেন মুটো-ধান-গাছ-তলে।
নিশ্চয় পাইবে তুমি পুনশ্চ খুঁজিলে॥
নিদ্রাভঙ্গে দ্বিজবর ধান-ক্ষেতে যান।
মুটো-ধান-গাছতলে দেখিবারে পান॥
পরম সুন্দর এক শিলা মনোহর।
কিন্তু এক কাল ফণী তাহার উপর॥
স্বপনের বার্তা দ্বিজ স্মরিয়া অন্তরে।
ফণীকে না করি ভয় শালগ্রাম ধরে॥
ধরামাত্র দেখিলেন ফণী নাই আর।
ফিরিলেন মহানন্দে আপন আগার॥
সেই এই রঘুবীর প্রাণের পুতলি।
নিত্যসেবা করে ঘরে বড় কুতূহলী॥