Prev | Up | Next

প্রথম খণ্ড - গোচারণ

বাল্য-লীলা শ্রীপ্রভুর গাইলে শুনিলে।
চির-অন্ধজনে মন দিব্য আঁখি মিলে॥
দেখে চোখে লীলাখেলা হৃদি-কুতূহল।
ত্রিতাপ-সন্তপ্ত-চিত নিমেষে শীতল॥
গ্রামের বালক যত সবে ভালবাসে।
দুইদণ্ড না দেখিলে ছুটে ছুটে আসে॥
গদাই-বিহনে খেলা ভাল নাহি হয়।
সাধ গদা'য়ের সঙ্গে রেতে দিনে রয়॥
আপন আপন ঘর নাহি থাকে মনে।
দিবানিশি খেলে বুলে গদা'য়ের সনে॥
ঘরে আইঠাকুরানী করিয়া রন্ধন।
গদা'য়ের সহ যত বালকে ভোজন॥
করাতেন নিতি নিতি আপন ভবনে।
দেখিতেন বসে বসে ব্রাহ্মণী-ব্রাহ্মণে॥
আইর রন্ধনকথা অপূর্ব বিশেষ।
গাইলে শুনিলে নাহি রহে দুখলেশ॥
সামান্য রাঁধিলে কভু ফুরাতে না চায়।
মুষ্টিক তণ্ডুলে গোটা ত্রিভুবন খায়॥
কিন্তু শূন্য পাক-পাত্র আই খেলে পরে।
মধুর আখ্যান শুন রন্ধন-ভিতরে॥
একদিন যায় দিন আর বেলা নাই।
নাহি খান অন্নজল ঠাকুরানী আই॥
তাহার কারণ, যাহা খাবার না খেলে।
থাকিতে হইত তাঁর বদ্ধ পাকশালে॥
সেইদিন বারে বারে বহুলোক খায়।
তাই তাঁর খাইবার বেলা ব'য়ে যায়॥
আর নাই বেশী অন্ন হাঁড়ির ভিতরে।
হেনকালে কয়জন লোক আসে ঘরে॥
আগে বলিয়াছি এই ব্রাহ্মণের ঘর।
জগন্নাথ যাইবার পথের উপর॥
নিত্য নিত্য সমাগত অতিথি ফকির।
অসময়ে আজ দশ হইল হাজির॥
বেশী অন্ন নাই ঘরে দেখি ঠাকুরানী।
অবিরল চোখে জল সভয় পরাণী॥
কম্পমান তনুখানি ভাবেন কি হবে।
না পাইয়া অন্নজল সাধু ফিরে যাবে॥
তণ্ডুল নাহিক ঘরে রাঁধিবারে ভাত।
প্রাণে সারা শিরে যেন পড়ে বজ্রাঘাত॥
হেনকালে দেখিলেন আই ঠাকুরানী।
নবম-বয়সী এক বালিকা-রূপিণী॥
পশ্চাৎ দাঁড়ায়ে নাড়ে আপনার হাত।
তাহে অফুরন্ত বাড়ে ব্যঞ্জনাদি ভাত॥
সেদিন হইতে আই নিজে যতক্ষণ।
অন্নব্যঞ্জনাদি নাহি করেন ভোজন॥
পাকশালে কোন দ্রব্য ফুরাতে না চায়।
যত আসে সকলেই খাইবারে পায়॥
নানাবিধ ব্যঞ্জনাদি অন্নসহ রাঁধি।
বালক-ভোজন ঘরে হয় নিরবধি॥
তেলি বেণে জেতে এই বালকেরা যত।
দুঃখী তাই গোচারণে নিত্য যেতে হ'ত॥
মাঝে মাঝে ল'য়ে যায় শিশু গদাধরে।
রঙ্গে হয় নানা খেলা অন্তর-প্রান্তরে॥
গদাই বড় খুশী তা সবার সনে।
খেলে খেলে বুলিবারে গিয়া গোচারণে॥
বড়ই মধুর এই বাল্য-লীলা-গান।
গাইতে শুনিতে করে মাতোয়ারা প্রাণ॥
শুন মন এক মনে কহি পরে পরে।
শুনেছি হইল যেমন কামারপুকুরে॥

Prev | Up | Next


Go to top