প্রথম খণ্ড - পাঠশালে অধ্যয়ন
৫
এখন কেবল বয়ঃ সাতের উপর।
জনক তাঁহার ত্যজিলেন কলেবর॥
পৈতার সময় প্রায় দেখিয়া আগত।
ভ্রাতৃগণ শুভদিন করে নির্ধারিত॥
ব্রাহ্মণ ব্যতীত ভিক্ষা অন্য কোন জাতি।
না দেওয়ার সেই বংশে কুলোচিত রীতি॥
সেই হেতু দ্বিজকন্যা গ্রামে যতজন।
ভিক্ষা দিতে গদাধরে করে আকিঞ্চন॥
হেথায় গদাই কন ধনী কামারিনী।
ভিক্ষা যদি দেয় তবে ভিক্ষা লব আমি॥
কখন না লব ভিক্ষা অপরের হাতে।
না হয় না হবে পৈতা ক্ষতি নাই তাতে॥
একি কথা গদাধর, কহে ভ্রাতাগণ।
কি লাগিয়া কুলপ্রথা কর অতিক্রম॥
শূদ্রদান কখন গ্রহণ নাই কুলে।
জানিয়া শুনিয়া কথা কেমনে বলিলে॥
কোন হেতু না শুনেন শিশু গদাধর।
ধনী হবে ভিক্ষামাতা একই রগড়॥
এত বলি মুখ ভারি ঘরে খিল দিয়া।
রহিলেন গদাধর আবদ্ধ হইয়া॥
ক্ষুধার সময় যায় না খুলেন দ্বার।
নরনারী আসে যত শুনে সমাচার॥
যে গদা'য়ে খাওয়াইয়া মহা সুখ মনে।
সে গদাই অনাহারে আবদ্ধ ভবনে॥
কেমনে গ্রামের লোক চিত্তে রহে স্থির।
বার্তা পেয়ে তাই ধেয়ে সকলে হাজির।
নাহিক উত্তর, তাঁরে যে যত বুঝায়।
যেন নাহি যায় কান কাহার কথায়॥
যবে ভাই রামেশ্বর যাইয়া আপনি।
বলিলেন দিবে ভিক্ষা ধনী কামারিনী॥
না হয় হইবে নষ্ট বংশকুলাচার।
শুনি বাণী তবে মুক্ত করিলেন দ্বার॥
মরি কি সৌভাগ্য তব ধনী কামারিনী।
ভিক্ষা দিলে তাঁয়, বিশ্বে ভিক্ষা দেন যিনি॥
ত্রাতা, পাতা, তারক, পালক সবাকার।
শিবময়, ইচ্ছাময়, ভবকর্ণধার॥
যদ্যপি থাকিতে তুমি অদ্যাপি বাঁচিয়া।
ভাগ্য মানিতাম পদ মাথায় ধরিয়া॥
যে যে স্থানে পাতিয়াছ চরণ দু'খানি।
সেখানের রেণু পাওয়া মহাভাগ্য গণি॥
কার অবতার তুমি কিছু শুনি নাই।
বৎস-হারা গাভী যেবা বিহনে গদাই॥
কি সাধ্য মহিমা গাই কি আছে শকতি।
এতেক বাৎসল্য যাঁর ঘটে বলবতী॥
মহা ভাগ্যবতী ধরাতলে বিদ্যমান।
বুঝি না জানি না কেবা তোমার সমান॥
ক'ড়ে রাঁড়ী অপুত্রক ধনী কামারিনী।
না বিইয়ে হৈল এবে রামের জননী॥
ভক্তপ্রিয় প্রভুদেব ভক্তে তাঁর প্রাণ।
ভক্তি-জোরে, ভক্তে করে, তাঁহারে সন্তান॥
অপার করুণা তাঁর ভকতের প্রতি।
শুনহ অপূর্ব কথা রামকৃষ্ণ-পুঁথি॥
লীলা-গীতি শ্রীপ্রভুর অমিয়-পূরিত।
শ্রবণ-কীর্তনে পূত চিত্ত সুনিশ্চিত॥