প্রথম খণ্ড - পাঠশালে অধ্যয়ন
৪
পাড়াগাঁয় পাঠশালে প্রচলিত রীতি।
প্রহ্লাদ-চরিত্র আর দাতাকর্ণ-পুঁথি॥
সরলবানানযুক্ত বাক্য সমুদয়।
পড়িতে পড়িতে হয় বর্ণ-পরিচয়॥
বর্ণপরিচয়-হেতু গুরু পাঠশালে।
প্রহ্লাদচরিত্র-পুঁথি সকালে সকালে॥
নিত্য নিত্য পড়াতেন শিশু গদাধরে।
সমস্ত মুখস্থ তাঁর বার বার প'ড়ে॥
প্রহ্লাদের অনুরাগ ভগবান-প্রতি।
পড়িতে হইত তাঁর বড়ই পিরীতি॥
সেই হেতু পুঁথিপাঠ হ'ত অন্য স্থানে।
মধু যুগী জেতে তাঁতী তাহার ভবনে॥
পাঠশালে ছুটি হ'লে শিশু গদাধর।
পড়েন প্রহ্লাদ-কথা করিয়া আদর॥
সুন্দর আখ্যান মন শুন সাবধানে।
শিশু গদাধর পুঁথি পড়েন কেমনে॥
অতি অনুরাগে পুঁথি হয় একদিন।
কত লোক নর-নারী যুবক-প্রাচীন॥
চারিধারে ঘেরে তাঁরে শুনে ব'সে ব'সে।
গদা'য়ের পুঁথিপাঠ পরম উল্লাসে॥
জন-মন-আকর্ষণী অতি মিষ্ট স্বর।
তাহাতে সবার প্রিয় শিশু গদাধর॥
অগোচরে শুনে এক হনু কুতুহলে।
নিকটে আমের গাছে ব'সে তার ডালে॥
শ্রবণে বিভোর প্রাণ ভাবের উচ্ছ্বাসে।
গাছ হ'তে হনুমান নামে অবশেষে॥
নাহি ত্রাস মহোল্লাস শুনেছি যেমন।
নিকটে বসিল ধরি শিশুর চরণ॥
যতক্ষণ পাঠসাঙ্গ নাহি হয় তাঁর।
হনুমান শুনে পুঁথি আনন্দ অপার॥
পাঠান্তে উঠায়ে পুঁথি শিশু গদাধরে।
পরশ করিয়া দিলা হনু-শিরোপরে॥
শ্রীপদে প্রণমি হনুমান কর-পুটে।
পুনরায় পূর্বেকার আমগাছে উঠে॥
কেবা এই পশুরূপী ভক্ত হনুমান।
কি বুঝি, চরণে তাঁর অসংখ্য প্রণাম॥
যত কিছু বিদ্যমান কামারপুকুরে।
স্থাবর জঙ্গম কিবা জীবের আকারে॥
প্রভু-অবতারে তাঁরা দেব-দেবী যত।
প্রভুর আজ্ঞায় সব সঙ্গে সমাগত॥
দেখ দেখ সাবধান সাবধান মন।
প্রাণান্তেও অন্য বুদ্ধি কর না কখন॥
ভগবান তব লীলা সুমূর্খ পামরে।
ভক্তিহীন বদ্ধ-আঁখি কি গাইতে পারে॥
ঘটেতে থাকিত যদি কিছু ভক্তিধন।
গাইতাম বাল্য-খেলা মনের মতন॥
বড়ই মধুর প্রভু-বাল্য-খেলা-কথা।
গাইব যেমন প্রভু পেয়েছি ক্ষমতা॥
সর্বজ্ঞ শ্রীপ্রভু তুমি সব তত্ত্ব জ্ঞাত।
ধরি নররূপ খেলিতেছ নর-মত॥
নর-মত রূপে বটে, কাজে কিন্তু নয়।
অমানুষী অপরূপ খেলা সমুদায়॥
নরবুদ্ধিগম্য প্রভু নহ কোন কালে।
কি করিয়া বুঝা যায় এ বুদ্ধির বলে॥
সত্যই দিয়াছ দুটি আঁখি জ্যোতিষ্মান।
বিষম পরদা সম্মুখেতে লম্বমান॥
পাষাণে রচিত এই পরদা-বিশেষ।
ভেদ করি চালি দৃষ্টি নাহি শক্তি-লেশ॥
কেমনে দেখিব প্রভু তব কারবার।
হীনদৃষ্টি ব্রহ্মা শিব, আমি কোন ছার॥
অবিদ্যা-মোহিত চিত মলিন মুকুর।
কৃপা কর শিশুরূপী দয়াল ঠাকুর॥