প্রথম খণ্ড - চিনুশাঁখারীর মিষ্টান্ন ও মালা গ্রহণ
১
অতীত বেদান্ত বেদ গীতাদি পুরাণ।
তপ-জপ যাগ-যজ্ঞ কোটি অনুষ্ঠান॥
দরশনে চারিধামে যে ফল না ফলে।
এক রামকৃষ্ণ-কথা গাইলে শুনিলে॥
অনায়াসে ফলে তায় লক্ষাধিক ফল।
রামকৃষ্ণ-কথা হেন শ্রবণ-মঙ্গল॥
ছার আমি মূঢ় কিবা প্রভু-কথা জানি।
বিরচিত বিশ্ব যাঁর, অখিলের স্বামী॥
ভেসে গেছে শুকদেব, মহাবেদব্যাস।
আভাস-প্রকাশে লাগে অন্তরে তরাস॥
কিবা রামকৃষ্ণ প্রভু কি তাঁর মহিমা।
ক্ষুদ্র চিতে করিতে না পারি কোন সীমা॥
সামান্য হৃদয় নহে অণুর আধার।
প্রভু-লীলা সিন্ধুবৎ অকূল পাথার॥
বিশাল তরঙ্গ তায় বিশ্ব-চূড়া ডুবে।
ভাসে কত বিষ্ণু, বিধি, খাবি খায় শিবে॥
অগণ্য ব্রহ্মাণ্ড নীচে বালুকার বন।
সহস্র সহস্র তায় প্রকাণ্ড তপন॥
দীপ্তিহীন ক্ষীণপ্রভা খদ্যোতের প্রায়।
বিলুপ্ত তরঙ্গে কভু কভু বাহিরায়॥
জগৎ-গরাসী নাম মহান্ প্রলয়।
সেই দেখে চমকে হৃদয়ে পায় ভয়॥
অচিন্ত্য অসীম যদি এদিকে আবার।
কৃপাময় রামকৃষ্ণ কৃপায় তাঁহার॥
ইন্দ্রিয়-অতীত যাহা বোধগম্য নয়।
চোখে চোখে পলকে পলকে দৃষ্ট হয়॥
ঘুচে সন্দ, মন দ্বন্দ্ব করে পরিহার।
আলোক উগারি নাশে নিবিড় আঁধার॥
বিষম মায়ার বন্ধ সব টুটে যায়।
তাই শ্রীপ্রভুর কথা না ফুটে কথায়॥
চিনু নামে একজন শাঁখারীর জাতি।
দরিদ্র তাহাতে বৃদ্ধ, গ্রামেতে বসতি॥
ব্যবসায় অল্প আয় কষ্টে গুজরান।
কিন্তু তার গদাধরে ছিল বড় টান॥
গদাধর তার ঘরে যান নিতি নিতি।
সবে সুবিদিত দুঁহে বড়ই পিরীতি॥
গদাধরে সমাদরে বসায় আসনে।
মিষ্টান্ন যা মিলে ভাল তাই দেয় এনে॥
ধীরে ধীরে খান প্রভু, চিনু বসি দেখে।
দোকানে খদ্দের এলে খাতির না রাখে॥
প্রেমে গদগদ চিত চিনু ভক্তিমান।
বিহ্বল এমন যেন শূন্য বাহ্যজ্ঞান॥
কিবা বলে কিবা করে কোন বোধ নাই।
না পাল্টি আঁখি দুটি দেখেন গদাই॥