Prev | Up | Next

প্রথম খণ্ড - চিনুশাঁখারীর মিষ্টান্ন ও মালা গ্রহণ

একদিন চিনুর কি ভাব হৈল চিতে।
চয়ন করিয়া ফুল দিব্যমালা গাঁথে॥
অনুরাগে গাঁথা মালা পরিপাটি কত।
হেনকালে গদাধর তথা উপনীত॥
হেরে তাঁরে চিনুর আনন্দ নাহি ধরে।
মালা গাঁথা সাঙ্গ করি চলিল বাজারে॥
আনিল মিষ্টান্ন কিনি মনের মতন।
স-মালা মিষ্টান্ন ক'রে কাপড়ে গোপন॥
ল'য়ে সঙ্গে গদাধর চিনু মাঠে চলে।
অন্তর প্রান্তরে জনশূন্য বৃক্ষতলে॥
কেহ কোথা নাই চিনু চেয়ে চারিপানে।
জানু পাতি করজোড়ে বৈসে চামুখানে॥
যতনের গাঁথা মালা বাহির করিয়ে।
প্রভুর গলায় দেয় গদগদ হয়ে॥
মিষ্টান্ন খাওয়ান হাতে ধরি গদাধরে।
শূন্য-বাক্ মুখ, আঁখি ঝরঝর ঝরে॥
দিনকর-কর লুপ্ত মেঘ-অন্তরালে।
লুকাইল আঁখি-দৃষ্টি নয়নের জলে॥
মিষ্টান্ন সহিত হাত পড়ে নানা স্থানে।
কভু নাকে, কভু চক্ষে, কভু পড়ে কানে॥
আপনে চিনুর হাত করিয়া ধারণ।
আনন্দে করিলা তার মিষ্টান্ন ভোজন॥
ভোজন-সমাপ্তে চিনু আপনা সম্বরি।
প্রভুরে কহেন কত করজোড় করি॥
আগত হয়েছে কাল জরাযুক্ত তনু।
কত হবে লীলা-খেলা দেখিতে না পেনু॥
বড়ই রহিল দুঃখ আমার অন্তরে।
করুণ কটাক্ষে রেখ অধীন কিঙ্করে॥
ধন্য ধন্য চিনু দুটি দেহ পদরেণু।
যথার্থ তোমার নাম হইয়াছে চিনু॥
চেনা কাজ বুঝ ভাল তাই চিনু নাম।
তোমার চরণে করি অগণ্য প্রণাম॥
বৃদ্ধ বটে চিনিবাস আঁটা-সোটা কায়।
গায়েতে প্রচুর বল রোগ নাই তায়॥
প্রভুরে দেখিয়া চিনু এত মত্ত হ'ত।
কাঁধেতে চড়ায়ে তাঁয় প্রচুর নাচিত॥
বলরাম-অবতার ভক্ত চিনিবাস।
দাদা শব্দে শ্রীপ্রভুর আছিল সম্ভাষ॥
দাদা ব'লে ডাকিলে গলিয়ে যেত চিনু।
পরম উল্লাস মন গদগদ তনু॥
অচল ভকতি হৃদে সৎশাস্ত্রবিৎ।
ভাগবতে চিনিবাস অতি সুপণ্ডিত॥
প্রভুর সহিত হয় নানা তর্কবাদ।
কখন চটিত তর্কে, কখন আহ্লাদ॥
শাস্ত্র লয়ে তর্কদ্বন্দ্ব কভু এত দূর।
সপ্তম ছাড়িয়া রাগ উঠিত চিনুর॥
উভয়ে উভয়ে কথা কত মুখে মুখে।
তুমুল বিবাদ দ্বন্দ্ব হয় মহা রোখে॥
পুনশ্চ সাক্ষাৎ নহে শপথ করিয়া।
পলাইত নিজ ঘরে দুরু দুরু হিয়া॥
প্রভুর উত্তর কথা চিনুর মতন।
আমার সঙ্কল্প নহে পুনঃ দরশন॥
হেন বিবাদের মাত্র দণ্ডেকের পর।
উভয়েই মহা খুশী পুনঃ একত্তর॥
প্রায় হয় এই খেলা চিনিবাস-সাথ।
পিতামহ পৌত্রে যদি বয়সে তফাত॥
চরিত্রে চিনুর বহে বিদুরের ধারা।
ভক্তিতে বিভোর চিত্ত উন্মাদের পারা॥
বিষয়সম্পত্তিহীন খেটে যেতে হয়।
পোষ্যবর্গ আছে ঘরে একাকী সে নয়॥
সে ভাবনা কখন না উদয় অন্তরে।
মিষ্টান্ন খাওয়ান কিন্তু নিত্য গদাধরে॥
সুন্দর তাঁহার ভাব গদাইর সনে।
দিবানিশি তাঁর চিন্তা বর্তমান মনে॥
চিনিবাস প্রভুদেবে বুঝেছিল ঠিক।
যথার্থ বাসিত তাঁহে প্রাণের অধিক॥
কেবা সম তাঁর যেবা 'বাসে গদাধরে।
অধম পামর তাঁর কৃপা ভিক্ষা করে॥

Prev | Up | Next


Go to top