Prev | Up | Next

প্রথম খণ্ড - বিশালাক্ষীর আবেশ

সাধ করি স্বগ্রামেতে নানা জাতি মিলে।
বাঁধিল যাত্রার দল যুবক সকলে॥
প্রাচীনের মধ্যে মাত্র চিনিবাস তায়।
মহা আম্বা আরম্ভেতে কহা নাহি যায়॥
চিনিবাস বড় চিনে গদাই-শিশুকে।
না রহে গদাই যথা চিনু নাহি থাকে॥
বড়ই সুমিষ্টকণ্ঠ শিশু গদাধর।
দুই-এক গানে যাঁর গরম আসর॥
ভক্তি কি রঙ্গাদি রস হাস্য-প্রহসনে।
সমকক্ষ কোন স্থানে না মিলে ভুবনে॥
যদিচ অল্প বয়ঃ বারর উপর।
সর্বরূপরসজ্ঞাত রসিকপ্রবর॥
একবার শিবরাত্রি মহেশ-বাসরে।
ভক্তবর সীতানাথ পাইনের ঘরে॥
নির্ধারিত হৈল হবে যাত্রা গোটা রাতি।
মহেশ-বাসর হেতু নিদ্রা নহে রীতি॥
অর্থ বিনা পল্লীগ্রামে পর্বোৎসব বন্ধ।
যদি হয় সবাকার বড়ই আনন্দ॥
যাত্রাকালে যাত্রাশালে যত নরনারী।
কাতারে কাতারে বসে মহোল্লাস ভারি॥
সাজঘর আসরের কিঞ্চিৎ তফাত।
বেশকারী গয়াবিষ্ণু প্রভুর সেঙাত॥
নানা জনে নানাবেশে পাঠান আসরে।
কেহ না দেখিতে পায় শিশু গদাধরে॥
গদাধর সবাকার আদরের ধন।
শ্রোতাগণ মনে মনে করে আন্দোলন॥
যাত্রা প্রায় অর্ধ সায় রাত্রি যায় ব'য়ে।
তবু না আসেন তিনি আসরে সাজিয়ে॥
আকুল তাঁহার জন্যে যত লোকজন।
হেনকালে শিব-বেশে হৈল আগমন॥
মহা শোভা পায় গায় মহেশের বেশ।
চেনা দায় নাহি কায় স্বরূপের লেশ॥
সুচিকন কেশগুচ্ছ তাহার বদলে।
রুক্ষবর্ণ জটাভার লম্বমান দুলে॥
স্ববর্ণ সুবর্ণ জিনি চাঁপা হেরে যায়।
বিভূতিতে আচ্ছাদিত মহাশোভা পায়॥
উপমায় কিবা গায় বর্ণজ্যোতি জ্বলে।
শরৎ-চন্দ্রিমা শুভ্র মেঘের আড়ালে॥
ফটিক রুদ্রাক্ষমালা শোভিত গলায়।
ঈষৎ আবেশ-বলে ঈষৎ দুলায়॥
এক করে শিঙা ধরা ত্রিশূল অপরে।
বাঘাম্বর বিচিত্রিত বসন উপরে॥
সর্বোপরি শোভমান শ্রীঅঙ্গে আবেশ।
ধীরে ধীরে মত্ত-প্রায় আসরে প্রবেশ॥
দর্শকেরা দেখে তাঁরে নহে গদাধর।
আগত কৈলাস ছাড়ি কৈলাস-ঈশ্বর॥
পূর্ণ হইল শিবাবেশ বাহ্য গেল ছেড়ে।
দুনয়নে বারিধারা অবিরল ঝরে॥
মাটি নরমিয়া গেল ধারা-বরিষণে।
কে জানে কোথায় জল আছিল নয়নে॥
শঙ্করের শিরে বাস জাহ্নবী আপনি।
পরম ঈশ্বর প্রভু অখিলের স্বামী॥
ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশের সবার ঈশ্বর।
প্রভুর শ্রীপাদপদ্ম জনমের ঘর॥
শঙ্কায় মাথায় নাহি পারে বসিবারে।
শিবভাব প্রভু-অঙ্গে তাই চক্ষে ঝরে॥
জ্ঞানহারা দর্শকেরা দেখিয়া মুরতি।
শিশু-গদাধর-অঙ্গে মহেশ-প্রকৃতি॥
গরগর মহাভাব উঠেছে সপ্তমে।
আপনার স্থানে নাহি নামে কোনক্রমে॥
চিনে যারা চিনু-আদি গ্রামবাসিগণ।
তাড়াতাড়ি বিল্বপত্র করিয়া চয়ন॥
চরণে অর্পণ করে মহা-অনুরাগে।
মহেশ-সন্তোষ দিব্য-নৈবেদ্য-সংযোগে॥
হর হর দিগম্বর স্তুতি মুখে গায়।
ধর ধর মহাভাব আপন ইচ্ছায়॥
তবে ভেঙে যায় ভাব অঙ্গে হয় লীন।
কেহ বলে হেন ভাবে যায় তিন দিন॥
ভাঙিল সেদিন যাত্রা না হইল আর।
প্রভু গদা'য়ের কথা তাজ্জব ব্যাপার॥
আর কিবা আছে বল এত বড় মিঠে।
গাইলে শুনিলে শুষ্ক গাছে রস ফুটে॥
কথার এ কথা নয় সত্য এ সকল।
রামকৃষ্ণ-কথা সত্য শ্রবণ-মঙ্গল॥

Prev | Up | Next


Go to top