প্রথম খণ্ড - কালীপূজা ও রমণীর বেশধারণ
৪
আকারেতে গদাধর বালকের সাজ।
নানা রঙ্গরসজ্ঞাত যেন রসরাজ॥
স্ত্রীলোকের যত খেলা জানিতেন তিনি।
ঘুসিম খেলার সঙ্গী গুসি নাপিতিনী॥
স্ত্রীলোকের সঙ্গে খেলা হাস্য পরিহাস।
প্রচুর প্রভুর তাহে আছিল উল্লাস॥
কভু বকুলের ফুলে আভরণ গাঁথি।
দু'হাতে পইছা বাজু শিরে ধরা সিঁথি॥
পরিধানে পাছাপেড়ে বসন সুন্দর।
কাঁখেতে কলসী গতি বেনেদের ঘর॥
দরজায় নারীগণে ডাকিতেন এঁটে।
আয় কে লো যাবি জলে সূর্য যায় পাটে॥
নারীগণ ফুল্লমন দেখি গদাধর।
একে একে কুড়ি দরে হয় একত্তর॥
যে জনার প্রয়োজন কিছু নাই জলে।
সেও কাঁখে কুম্ভ করি এসে মিশে দলে॥
ধীরে ধীরে চলে জলে মাঝে গদাধর।
প্রভুর বদন ঢাকা ঘোমটা-ভিতর॥
পুরুষেরা যত সব বসিয়া সদরে।
জলে যেতে যেই পথ, তার দুই ধারে॥
কেহ না চিনিতে পারে প্রভু গদাধর।
জল-হেতু কাঁখে কুম্ভ যান সরোবর॥
এরূপ খেলেন প্রতিবাসিনীর সনে।
ব্রজভাবোদয় হয় বাল্যলীলা শুনে॥
বৃন্দার মা নামে এক ব্রাহ্মণের মেয়ে।
বড় প্রীতি ছিল তাঁর প্রভুরে খাওয়ায়ে॥
অন্ন-ব্যঞ্জনাদি তেঁহ করিয়া রন্ধন।
হামেশা প্রভুরে করে ঘরে নিমন্ত্রণ॥
বড়ই সন্তোষ প্রভু তাঁহার রন্ধনে।
যাচিতেন নিমন্ত্রণ না হ'ত যে দিনে॥
যার যেন সাধ তাঁরে তাই দেয় খেতে।
বড় দুঃখ করে যারা অতি খাট জেতে॥
খেতির মা নামে এক, জাতি সূত্রধর।
বড় সাধ ঘরে বসে খান গদাধর॥
বলিতে নাহিক শক্তি প্রকাশিতে ভয়।
গোপনে মনের কথা শঙ্করীরে কয়॥
ভাগ্যবতী ভিক্ষামাতা ধনী কামারিনী।
শঙ্করী আছিল তাঁর কনিষ্ঠা ভগিনী॥
ভকত-বৎসল ভক্তপ্রিয় গদাধর।
বুঝিলা অন্তরে কিবা ভিতরে খবর॥
দেখামাত্র শঙ্করীরে কন সংগোপনে।
কি বলে খেতির মাতা কিবা সাধ মনে॥
শঙ্করী বলেন সব বুঝেছ বারতা।
কি খাইবে বল তবে এনে দিব হেথা॥
শ্রীপ্রভু বলেন হেথা পথে কে খাইবে।
ঘরে বসে খাব তার যাহা কিছু দিবে॥
ভক্তবৎসলতা-ভাব মরি কি সুন্দর।
অনায়াসে যান খেতে ছুতারের ঘর॥
শূদ্রদত্ত বস্তু যেই বংশে নাহি চলে।
কুলাচার এত আঁটা জন্ম সেই কুলে॥
একবার কুলরীতি করি অতিক্রম।
শূদ্রদত্ত ভোজ্য আই করেন গ্রহণ॥
পেয়ে তত্ত্ব ক্রুদ্ধচিত্ত উন্মত্তের প্রায়।
শুদ্ধাচারী পতি তাঁর তাড়া কৈলা তাঁয়॥
কাঠের পাদুকা ল'য়ে যত গায় জোরে।
দাঁড়ায়ে মারেন বৌলা পিঠের উপরে॥
হেন বংশে ল'য়ে জন্ম প্রভু ভগবান।
যে দেয় আদর করি তার ঘরে খান॥
জাতির খাতির মনে কিছুমাত্র নাই।
ভক্তবাঞ্ছাকল্পতরু ঠাকুর গদাই॥