প্রথম খণ্ড - খেলাছলে আসন-প্রদর্শন
১
দেখ মন যা খেলিলা বালক গদাই।
বুঝিবারে বালকের কৃপাকণা চাই॥
না দেখিতে পেলে লীলা বুঝা বড় দায়।
চাঁদের কিরণ যেন চাঁদেতে মিশায়॥
না হইলে চক্ষুষ্মান কে দেখিতে পারে।
থালার মতন চাঁদ কত আলো ধরে॥
দিন দিন যায় যত বাড়ে বয়ঃক্রম।
দেখান সবারে খেলা নূতন নূতন॥
কেহ না বুঝিতে পারে কি ভিতরে তাঁর।
বিনা দুই-এক আর চিনু শঙ্খকার॥
এখন শ্রীপ্রভুদেব না বলিয়া কারে।
থাকিতেন দুই-চারি দিন স্থানান্তরে॥
কোথায় গমন কিবা স্থান কোন্ খানে।
সে তত্ত্ব সুগুপ্ত কেহ কিছু নাহি জানে॥
লুপ্ত পূর্বকার ভাব নাহিক উল্লাস।
চিন্তাতুর মুখভার উদাস উদাস॥
শৈশব হইতে আজিতক নিরন্তর।
রঙ্গ-রস-পরিহাস কতই রগড়॥
বঞ্চিলেন আগাগোড়া যাহাদের সনে।
তারাও কহিলে কথা নাহি চান পানে॥
বহু জেদ অনুরোধ করিবার পর।
বিষাদিত ক্ষুব্ধচিতে দিতেন উত্তর॥
বৃথা কাজে অনর্থক এত দিন গেল।
সুন্দর সে হরি তাঁর তত্ত্ব না হইল॥
বিষয়ে মলিনবুদ্ধি তোমরা সকলে।
কি মধুর হরি-কথা নাহি কও ভুলে॥
সকল সন্তাপহর হরি-আলাপনা।
স্মরণ-মনন নানা সাধন-ভজনা॥
তাহে নাহি রুচি, রুচি হাস্য-পরিহাসে।
এরূপে কাটিলে কাল কি হইবে শেষে॥
অনিত্য সংসার এই ভেবে দেখ ভাই।
হরি বিনা মানুষের অন্য গতি নাই॥
হরি-কথা প্রভু যত কন সঙ্গিগণে।
চেয়ে দেখে তাঁয় কথা নাহি শুনে কানে॥
ভাগ্যবান সঙ্গিগণ হরি চায় নাই।
বড় খুশী দিবানিশি পাইলে গদাই॥
ব্রহ্মানন্দ-সম্ভোগেতে যে সুখ উদয়।
প্রভু-সঙ্গ-সুখ-সনে কিছুমাত্র নয়॥
মরি কি মধুর নর-লীলা ধরাধামে।
নরদেহে নিজে হরি মায়া-আবরণে॥
মুগ্ধকর সহচর সদা সঙ্গে বাস।
তাহারাও তিলমাত্র না পায় আভাস॥
অমৃতসমান ক্ষীর মাতৃ-বক্ষে স্থান।
খায় শিশু পায় পুষ্টি নাহি জানে নাম॥
সেইমত শ্রীপ্রভুর যত সহচর।
নাহি বুঝে পরানন্দ, ভুঞ্জে নিরন্তর॥
শ্রীপ্রভুর সঙ্গ-সুখ করে আস্বাদন।
রুক্ষ হরি-কথা কেন করিবে শ্রবণ॥
সঙ্গ-সুখ-ভোগী যারা সঙ্গ-সুখ চায়।
প্রভু-সঙ্গ-সুখানন্দ না আসে কথায়॥
যে ভুগেছে সে জেনেছে তাহার মরমে।
উপমায় অলিকুল যেমন কুসুমে॥
মধু পেলে খায়, নৈলে নাহি খায় আর।
উপবাসে যদি হয় জীবন-সংহার॥
চাতক ফটিকজলে যেমন পিয়াসে।
যায় প্রাণ তবু নাহি জলাশয়ে বসে॥
সেইমত যে করেছে প্রভু-সহবাস।
না করে কখন অন্য সুখ-অভিলাষ॥