প্রথম খণ্ড - খেলাছলে আসন-প্রদর্শন
২
ভক্তবাঞ্ছাকল্পতরু প্রভু গদাধর।
যে ভক্তে যা চায়, দায় তাঁহার উপর॥
সঙ্গে খেলিবারে চায় যত সঙ্গিগণ।
করিবারে তাহাদের বাসনা পূরণ॥
রচিলা নূতন খেলা সময়ের মত।
অতি মনোহর প্রভু গদাই-চরিত॥
মোহিত বিমুগ্ধ-চিত যত সঙ্গিগণ।
প্রভুর নূতন খেলা করি দরশন॥
যোগাসন যতগুলি যোগিজনে জানা।
প্রভুর প্রচুরভাবে সব আছে জানা॥
সুদীর্ঘজীবনযুক্ত ঋষি-মুনিগণ।
সে আসন অভ্যাসেতে আগোটা জীবন॥
কাটায় অশেষরূপ সুখ পরিহরি।
ফল মূল জল কিংবা বাতাহার করি॥
তবু নহে সিদ্ধকাম বৃথা শ্রম যায়।
তাহাই করেন প্রভু কথায় কথায়॥
যোগেশ-দুঃসাধ্য সেই অসাধ্য-সাধনা।
স্বতঃসিদ্ধ শ্রীপ্রভুর সব ভাল জানা॥
ঘরে ভরা নানা নিধি আছয়ে যাঁহার।
তখনি বাহির করে ইচ্ছা যবে তাঁর॥
অনন্ত রতনাগার দেহ শ্রীপ্রভুর।
দেবের দুর্লভ দ্রব্য প্রচুর প্রচুর॥
দেশের মানুষে কিবা বুঝিবে আসন।
চাষে খাটে মোটা লোক নিরক্ষর জন॥
ধর্মশাস্ত্র-অধ্যয়নে বুদ্ধি বিপরীত।
ব্যাকরণে সন্ধি জানে সে অতি পণ্ডিত॥
আসন কাহারে কয় কি আছে আসনে।
কি ব্রাহ্মণ কি বৈষ্ণব কেহ নাহি জানে॥
আসনের নাম দেশে এই বলবৎ।
সংগ্রাম-কৌশল-কার্য কুস্তি কসরত॥
হেনভাবে করিতেন আসন গোসাঁই।
যে দেখে সে বুঝে যেন অঙ্গে অস্থি নাই॥
দর্শকেরা বুদ্ধিহারা পাষাণের প্রায়।
বলেন গদাই হেন শিখিল কোথায়॥
নিকটস্থ গ্রামে গ্রামে পড়ে গেল সাড়া।
কেহ নাহি কুস্তি-পটু গদাইর পারা॥
সব তত্ত্ব সুবিদিত ছিল চিনিবাস।
বলিতেন প্রভুদেবে করিয়া সম্ভাষ॥
বুঝেছি বুঝেছি তত্ত্ব ওরে গদাধর।
এবারে উঠেছে তোর ভিতরেতে ঝড়॥
যাবি চলে লীলা-স্থলে না রহিবি আর।
তাই কর খেলা ছেড়ে বৈরাগ্য-বিচার॥
আপ্তসাঙ্গ চিনিবাস দৃষ্টি বহুদূর।
বুঝে সকলের সার গদাইঠাকুর॥
যাহা দেখাইলা প্রভু কামারপুকুরে।
খেলা ভিন্ন অন্য জ্ঞান কেহ নাহি করে॥
বুঝাবুঝি-পক্ষে যারা ছিল আগুয়ান।
ভুলিত সকল দেখি প্রভুর বয়ান॥
সেই ঈশ্বরীয় মায়া যে মায়ার বলে।
ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশের বুদ্ধি যায় দুলে॥
হেন মায়া ল'য়ে খেলা করে গদাধর।
মায়াপতি মায়াতীত পরম ঈশ্বর॥
ধরি নর-কলেবর মায়ায় মোহিত।
রামকৃষ্ণ শ্রীপ্রভুর বিচিত্র চরিত॥
শ্রবণ-কীর্তনে নাশে মায়ার বন্ধন।
স্মরণ-মননে হয় তাপ-বিমোচন॥
হয় আঁখি-উন্মীলন ঘুচে অন্ধকার।
ভবসিন্ধু-গোষ্পদ হেলায় হয় পার॥
ভেলায় বসিয়া দেখে তরঙ্গ-তুফান।
রামকৃষ্ণ-কথা হেন মঙ্গল-নিদান॥
সায় বাল্য-লীলাগীত শ্রুতি-সুমধুর।
গাইব দ্বিতীয়-খণ্ডে সাধনা প্রভুর॥