Prev | Up | Next

দ্বিতীয় খণ্ড - কলিকাতায় শ্রীশ্রীপ্রভুর আগমন

রামকৃষ্ণ-লীলাকথা শ্রবণ-মঙ্গল।
ত্রিতাপ-সন্তপ্ত চিত শুনিলে শীতল॥
নিরমল সুবিমল হৃদয়-মুকুর।
প্রতিভাত হয় যথা রূপ শ্রীপ্রভুর॥
ছটার ঘটায় মুগ্ধ হয় প্রাণমন।
নূতন জীবন উঠে যায় পুরাতন॥
বিমোহিত পঞ্চভূত ইন্দ্রিয়নিচয়।
লক্ষ মন যেই মন এক মন হয়॥
ঘুচে সন্দ-অন্ধকার অজ্ঞানাবরণ।
মায়াপাশ-ফাঁস মহাত্রাস বিনাশন॥
জগৎমোহন মায়া বিশ্বে ফেলে ফাঁদে।
দেখিয়া প্রভুর লীলা সেও বসি কাঁদে॥
এহেন লীলার সিন্ধু কথা শ্রীপ্রভুর।
কলিকালে কূপে খেলে তরঙ্গ সিন্ধুর॥
মজার ঠাকুর হেন না হয় শ্রবণ।
দেখান নখের কোণে গোটা ত্রিভুবন॥
দেখিবারে আঁখির সাহায্য নাহি লাগে।
রামকৃষ্ণ-লীলাকথা হৃদে যার জাগে॥
কথার মাহাত্ম্য-কথা সাধ্য কার করে।
হিঁয়ালি কহিনু এবে ভেঙে দিব পরে॥
গুপ্ত অবতার প্রভু অখিলের রাজ।
গায়ে পরা নিরক্ষর ব্রাহ্মণের সাজ॥
অলঙ্কার দীনাচার হীনতম জনে।
সর্ব-অগ্রে নমস্কার বিচারবিহীনে॥
পরিচ্ছদ-বলে অন্য রূপ ধরে নরে।
সে যেন আপুনি তেন ভিতরে ভিতরে॥
সন্দেহ হইলে, লৈলে বাস-আবরণ।
পুনরায় তাই হয় সে নিজে যেমন॥
সে রূপ-ধরণ নহে শ্রীপ্রভুর বেশ।
ঠিক দীন-দুঃখী নাহি সন্দেহের লেশ॥
কায়মনোবাক্যে খেলে বেশের মূরতি।
সমরূপ রং-ঢং স্বভাব-প্রকৃতি॥
জন্মাবধি মাতৃগর্ভে বেশের গঠন।
সে বুঝে মানুষে কিসে ব্রহ্মাদির ভ্রম॥
যে ঠাকুর এতদূর অবিকল সাজে।
তিল-আধ নাহি শক্তি নরে তারে বুঝে॥
কর্ম-কাণ্ড সেইমত মূরতি যেমন।
মায়াপর ক্ষুদ্র নর মুদিত নয়ন॥
সৎবুদ্ধিহীন ক্ষীণ আসক্তির দাস।
কামিনীকাঞ্চন-সেবা সদা অভিলাষ॥
অন্তর্দৃষ্টি নাহি বাহ্যে গত মন-প্রাণ।
তৈলকার-যন্ত্রে বদ্ধ বলদ সমান॥
কেমনে দেখিবে লীলা কি চিনিবে তাঁয়।
মহাযোগেশ্বর যথা পাগল বনায়॥
বালকের প্রায় বিষ্ণু ভাসে সিন্ধুনীরে।
কি রহস্য চারি আস্য গাভী-বৎস হরে॥
মত্তবৎ শুকদেব বিহীন-বসন।
পুরাণ লিখিয়া ব্যাস তবু ক্ষুণ্ণমন॥
সর্ব-অঙ্গ-ইন্দ্রিয়াদি এক তানে ল'য়ে।
শুদ্ধনাম অবিরাম নারদ গাইয়ে॥
না পাইয়া কোন তত্ত্ব উদাসীর প্রায়।
সুকৌশল গণ্ডগোল করিয়া বেড়ায়॥
অনন্ত বদনে জপি না পেয়ে আভাস।
অনন্ত মরমে কৈল পাতালেতে বাস॥
অগণন ফণা-মাথা একত্র করিয়া।
লজ্জায় ধরণী ধরি রাখে আবরিয়া॥
দেবগণ বৃথা শ্রম অনর্থ যাতনা।
বুঝিয়া বিহরে স্বর্গে লয়ে বারাঙ্গনা॥
কিবা হাসি যোগী ঋষি শ্রদ্ধার আস্পদ।
আশায় গোঁয়ায় বনে ছাড়ি জনপদ॥
অনশনে একমনে ধ্যানে নিমগন।
গত কত শত যুগ না যায় গণন॥
তবু নয় সিদ্ধকাম মরম অধিক।
লুকায় লইয়া কায় সুদীর্ঘ বল্মীক॥
হেন তত্ত্বাতীত যাঁরে না মিলে সাধনে।
মায়া-মত্ত-চিত নরে কি প্রকারে চিনে॥
এ হেন ঠাকুর গুপ্ত অবতার সাজে।
সঙ্গে আত্মগণ সাঙ্গ ধরণীর মাঝে॥
নিজে যেন মহাগুপ্ত তেন আত্মগণ।
খনিমধ্যে কাদামাখা মানিক যেমন॥
দুর্বল সুগুপ্ত তবু সর্বশক্তিমান।
দেখিবে, যে লবে প্রভু রামকৃষ্ণ নাম॥
শুনরে অবোধ মন লীলাকথা তাঁর।
ভবব্যাধি-মহৌষধি শান্তির ভাণ্ডার॥

Prev | Up | Next


Go to top