দ্বিতীয় খণ্ড - কলিকাতায় শ্রীশ্রীপ্রভুর আগমন
৩
এ হেন সময় তথা প্রভুর গমন।
উদাসীন বিদ্যাভ্যাসে হইল না মন॥
কাজেই অগ্রজ নিয়োজিত কৈলা তাঁয়।
যজমান-ঘরে নিত্য ঠাকুরসেবায়॥
মনোমত পেয়ে কর্ম অনুজ তখন।
অগ্রজের অনুমতি করেন পালন॥
শ্রীপ্রভুর স্বভাবেতে বহে অবিকল।
কুসুমের পরিমল কোমল শীতল॥
জীব-মধুকর মত্ত বিভোর যাহায়।
যে আসে যখন সেই ফুলের সীমায়॥
যজমান-ঘরে যত পুরুষ কি মেয়ে।
সকলের মহানন্দ প্রভুরে পাইয়ে॥
বিশেষতঃ স্ত্রীলোকেরা হৃদয় সরলা।
বয়োনির্বিশেষে বৃদ্ধা যুবতী কি বালা॥
দুইবেলা যাওয়া-আসা তাহাদের ঘরে।
দেখাশুনা আলাপনা ঘনিষ্ঠতা বাড়ে॥
ক্রমে পেয়ে পরিচয় গুণ শ্রীপ্রভুর।
হইল দ্বিতীয় হেথা কামারপুকুর॥
ফলমূল মিষ্টান্নাদি মনের মতন।
সতত তাঁহাকে দিত করিয়া যতন॥
না দেখিলে একদিন ব্যাকুল অন্তর।
লইত যে কোনরূপে প্রভুর খবর॥
শুনিত অমিয়-মাখা শ্রীমুখের গান।
পুলকিত তাহে এত দ্রবিত পরাণ॥
গানে তাঁর মহাশক্তি মিশান থাকিত।
হউক পাষাণ তবু শুনিলে গলিত॥
হইত তখনি আঁখি জলের ফোয়ারা।
অবিরত বিগলিত দরদরধারা॥
মহাভাগ্যবান যেবা শুনিয়াছে কানে।
আজীবন মাধুরী-ঝঙ্কার তুলে প্রাণে॥
মোহনিয়া শ্রীবদনে গীত এত মিঠে।
শুনিলে হৃদয়-তন্ত্রী নেচে নেচে উঠে॥
এতেক রূপের ছবি বাক্যে না বেরোয়।
ভুবনমোহিনী মায়া দেখে মুগ্ধ যায়॥
তদুপরে গীতিস্বরে এতই মাধুরী।
শ্রীকণ্ঠে লুকান যেন মোহনবাঁশরী॥
সকলেই মুগ্ধচিত সঙ্গীত-শ্রবণে।
কে বলিবে কি আনন্দ দিব্য দরশনে॥
যে বারেক দেখিয়াছে শুনিয়াছে গান।
তার ঘরে আর নাহি থাকে মনপ্রাণ॥
রামকৃষ্ণ-লীলা-কথা অপরূপ মিঠে।
যত ধীরে যাবে তলে তত সুধা উঠে॥
হৃদয়ের তৃপ্তিকর মধুর ভারতী।
ধীরে ধীরে শুন মন রামকৃষ্ণ-পুঁথি॥