দ্বিতীয় খণ্ড - পুরী-প্রতিষ্ঠা
১
দেখহ প্রভুর রঙ্গ কত সংগোপন।
রঙ্গভূমে প্রথমে হাজির কোন্ জন॥
বৃহৎ করম-কাণ্ডে চাই টাকা-কড়ি।
তাই চুপে চুপে জুটে দুজন ভাণ্ডারী॥
শিরে ধরি তাঁহাদের যুগল চরণ।
যা লইয়া কৈলা প্রভু খেলার পত্তন॥
ভাগ্যবতী ভাগ্যবান ভাণ্ডারী প্রভুর।
রানী রাসমণি তাঁর জামাতা মথুর॥
কেমনে আসরে নামে কিবা সংযোটন।
চির-অন্ধ শুনে পায় সুন্দর নয়ন॥
রানী রাসমণি জানবাজার বসতি।
নানা গুণে বিভূষিতা দেশে দেশে খ্যাতি॥
অতুল সম্পত্তি বহু টাকাকড়ি ঘরে।
কুবের আবদ্ধ যেন কোষাগার-দ্বারে॥
তাঁহার ভাগ্যের কথা না যায় বাখানি।
ধনবতী যেন তেন ভক্তিমতী রানী॥
শ্যামায় পিরীতি বড় শ্যামা ধ্যান-জ্ঞান।
বড়ই বাসনা মনে যাবে কাশীধাম॥
পূজা দিতে বিশ্বেশ্বরে অন্নপূর্ণা মায়ে।
যেন তেন ভাবে নয় বিশেষ করিয়ে॥
সেহেতু স্বতন্ত্র করে ধনের সঞ্চয়।
করিতে পারেন যেন মনোমত ব্যয়॥
সময় দেখিয়া তবে কৈল আয়োজন।
দাস-দাসী কর্মচারী যাহা প্রয়োজন॥
একশত নৌকা প্রায় পরিপূর্ণাধার।
ধন অর্থ নানাবিধ দ্রব্যের সম্ভার॥
একত্তরে নৌকা সব বাঁধাইল ঘাটে।
যেখানে বসতি তাঁর তার সন্নিকটে॥
যেদিনে যাত্রিক দিন হয় নির্ধারিত।
তার পূর্বরাত্রে দেখে স্বপন বিস্মিত॥
সম্মুখে আসিয়া তাঁর ইষ্টদেবী কন।
কাশীধামে যাইবার নাহি প্রয়োজন॥
পছন্দ করিয়া ক্রয় করহ সত্বরে।
মনোরম স্থান এক ভাগীরথী-তীরে॥
পুরী বিনির্মিয়া তথা অতি শীঘ্রগতি।
স্থাপনা করহ মোর পাষাণ-মূরতি॥
নিত্যপূজা-ভোগ-রাগ-ব্যবস্থা সহিত।
আদেশে আমার তুমি না হবে কুণ্ঠিত॥
প্রতিষ্ঠিত মূরতিতে হয়ে অধিষ্ঠান।
লইব তোমার পূজা না হইবে আন॥
বিভোরা বিস্ময়ানন্দে অন্তর বিহ্বল।
জাগিয়া নয়নে ঢালে অবিরল জল॥
ত্বরান্বিতে ডাকি তবে কর্মচারিগণে।
আজ্ঞা দিল উপযুক্ত স্থান-অন্বেষণে॥
এখানে সেখানে দেখি কৈল নির্ধারিত।
যেখানে হইল পুরে পুরী বিনির্মিত॥
শহরের তিন ক্রোশ উত্তর অঞ্চলে।
শিয়রেতে সুরধুনী হেসে হেসে চলে॥
শ্যামালয়-বিনির্মাণে বহু অর্থব্যয়।
যত লাগে দেয় রানী কাতর না হয়॥
যদিচ জাতিতে তেঁহ মাহিষ্য-রমণী।
উদারপ্রকৃতি তাঁর রাজরানী জিনি॥
সুন্দর মন্দির দুটি পুরীর ভিতরে।
এক রাধাশ্যাম অন্য শ্যামা মার তরে॥
আর বার শিবলিঙ্গ পশ্চিমে স্থাপন।
চাঁদনি দক্ষিণে তার অতি সুশোভন॥
কব কত ঘরবাড়ি যথাযোগ্য স্থানে।
দুই নহবতখানা উত্তর-দক্ষিণে॥
গঙ্গাগর্ভে বাঁধা ঘাট পুকুর বাগান।
যেইমতে সাজে পুরী সেমতে সাজান॥
খাজাঞ্চী দেওয়ান মসী-বৃত্তি ভৃত্য কত।
বদ্ধদ্বারে দ্বারবান অসি নিষ্কাশিত॥