Prev | Up | Next

দ্বিতীয় খণ্ড - পুরী-প্রতিষ্ঠা

অষ্টনায়িকার মধ্যে রানী একজন।
প্রভু-অবতারে এবে ধরায় জনম॥
শ্যামাপদে অতি মন তাঁয় রতি-মতি।
শ্যামা নামে মত্তপ্রায় এতই পিরীতি॥
শ্যামা-নাম সদা জপ, রূপ ধ্যান করে।
বিষয়েতে হাত, শ্যামা মনের ভিতরে॥
ঠিক আত্মবৎ সেবা হইবে শ্যামার।
প্রবল বাসনা হৃদে রানীর সঞ্চার॥
গুপ্ত কথা ব্যক্ত করি কহে সর্বজনে।
আনিবারে শাস্ত্রবিৎ পণ্ডিত-ব্রাহ্মণে॥
শাস্ত্রের বিধানে মত বলবৎ কিবা।
কেমনে হইতে পারে অন্ন-ভোগ-সেবা॥
পণ্ডিতবর্গের হইল বিধান বিহিত।
শূদ্রের ঠাকুরে নাহি অন্নভোগ রীত॥
বিধানে বিষণ্ণ রানী বুক ফেটে যায়।
মায়ে অন্ন দিব কেন বিধি নাহি তায়॥
বিধিতে ভক্তিতে কত প্রভেদ দেখ না।
বিধি-শাস্ত্রে বিধিমাত্র বিধি-বিড়ম্বনা॥
কৈবর্তকুলজা রানী ছোট জাতি কয়।
বিধিবৎ ভট্টাচার্য ব্রাহ্মণনিচয়॥
এ দুয়ে প্রভেদ কত বচনে না সরে।
থাক বিধিবিৎবর্গ বিধি ল'য়ে ঘরে॥
রানী না হইল বড় ভক্তি ঘটে যার।
বলিহারি বিধি-দড়ি লোক দেশাচার॥
ভক্তিবলে ভকতের বেডউল চাল।
মহাব্যাধি বেদবিধি না পায় নাগাল॥
হইলে অভক্ত দ্বিজ কি কহিব তাঁকে।
নীচ জাতি উচ্চে স্থিতি ভক্তি যদি থাকে॥
ভক্তির উচ্ছ্বাসে দেখ কি করম তাঁর।
ধনরত্নে পরিপূর্ণ রানীর আগার॥
অতুল সম্পত্তি উচ্চ ত্রিতল আলয়।
মনোহরা দ্রব্যে ভরা বলিবার নয়॥
কিছুই না লাগে ভাল ক্ষিপ্তপ্রায় বুলে।
শাস্ত্রের বিধান-বাণ এত হৃদি জ্বলে॥
সদুপায়-হেতু রানী ভৃত্যে আজ্ঞা করে।
দেখহ যতেক টোল শহর-ভিতরে॥
স্থানান্তরে আছে যত অধ্যাপকজন।
ভাষ-পত্রে সমাচার করহ প্রেরণ॥
যথা আজ্ঞা ভৃত্যগণ অগণন ছুটে।
আনিতে বিধান গেল কিছু দিন কেটে॥
মনোমত বিধি কেহ দিতে নাহি পারে।
অবশেষে আসে রামকুমার-গোচরে॥
বড়ই শ্যামার ভক্ত শ্রীরামকুমার।
বিধি-শাস্ত্র ভক্তি-শাস্ত্র বহু জানা তাঁর॥
শ্যামা সানুকূল অতি শ্রীরামকুমারে।
দেন দরশন তায় ডাকিলে তাঁহারে॥
শাস্ত্রজ্ঞ যেমন তিনি তেন ভক্তিমন্ত।
শ্যামা জিবে লিখে দেন জ্যোতিষের মন্ত্র॥
সেই হেতু সিদ্ধবাক্ শ্রীরামকুমার।
যে কোন কারণে বাক্য নহে টলিবার॥
বিধান দিলেন তিনি বিধি-শাস্ত্র দেখি।
দিলে পরে পুরীখানি দানপত্র লিখি॥
কোন সৎবংশোদ্ভব ব্রাহ্মণের নামে।
অন্নভোগ রীতি তবে শাস্ত্রের বিধানে॥
শুনি বিধি-অন্বেষক আনন্দবিধান।
রানীর নিকটে শীঘ্র করিল পয়ান॥
আপনার মন্ত্রদাতা গুরুদেবে ডাকি।
দিলা রানী তাঁর নামে দানপত্র লিখি॥

Prev | Up | Next


Go to top