দ্বিতীয় খণ্ড - পুরী-প্রতিষ্ঠা
৯
লয়ে অনুমতি প্রভু অগ্রজের স্থানে।
ফিরিয়া আইলা দেশে আপন ভবনে॥
দেশে হইয়াছে রাষ্ট্র কথা বহু দূর।
শ্রীরামকুমার সেবে কৈবর্ত-ঠাকুর॥
নিন্দাবাদ আন্দোলন করে সর্বজনে।
কুলের কলঙ্ক-কাজ করিল কেমনে॥
কথায় না দেন কান প্রভু গদাধর।
ভিতরে অন্তরে তাঁর আনন্দ বিস্তর॥
তাঁর খেলা কেবা বুঝে একা তিনি বিনে।
স্বভাব-সুলভ হাসি-খুশী সবা-সনে॥
শিশুবয়ঃ গেছে প্রভু বয়স্ক এখন।
শৈশবভাবের পক্ষে নাই বৈলক্ষণ॥
বয়সের সঙ্গে শিশুভাব হয় বড়।
এ কথা বুঝিতে মন-বুদ্ধি চাই বড়॥
সরল শৈশব-ভাব চন্দ্রিমা-কিরণ।
কলায় কলায় বাড়ে কভু নহে কম॥
বয়স দেখিয়া কয় প্রতিবাসিগণে।
এবে গদায়ের বিয়া হইবে কেমনে॥
হইলে বিয়ার কথা প্রভু অতি খুশী।
কথার উত্তর দেন মৃদুমন্দ হাসি॥
মনোমত ঘটে কন্যা মিটে মন-সাধ।
হয় যেন গাছতলা কর আশীর্বাদ॥
অদ্ভুত ঘটনা বিয়া কব পরে মন।
শিয়ড়ে চলিলা প্রভু হৃদুর ভবন॥
গীতপ্রিয় গৌড়বাসী সর্বজনে জানা।
শিয়ড়েতে একদিন গায় কোন জনা॥
গায়কের কণ্ঠরব কানে যার উঠে।
নরনারী ছেলে বুড়ো সবে আসে ছুটে॥
হৃদয় সসঙ্গ প্রভু বসি সেই স্থলে।
আইলা রমণী এক কন্যা করি কোলে॥
অল্পবয়া কন্যা তিন বর্ষ পরিমাণ।
যুগল চরণে করি অসংখ্য প্রণাম॥
জননী ঝিউড়ি সেইখানে বাপ-ঘর।
হৃদয়ের প্রতিবাসী চেনা পরস্পর॥
শুধুমাত্র চেনা নয় আত্মীয়তা অতি।
নিকটসম্পর্ক দ্বিজবংশ সমজাতি॥
গায়কের গীত সাঙ্গ হয়ে গেলে পর।
শিশু মেয়ে লয়ে লোকে জুড়িল রগড়॥
তার মধ্যে বালিকায় কহে একজন।
দেখ না এখানে কত লোক সমাগম॥
মনোমত কারে চাহ করিবারে বিয়া।
দেখাইয়া দাও দেখি হাত বাড়াইয়া॥
এত শুনি তখনি বালিকা তুলি কর।
নির্দেশ করিয়া দিলা প্রভু গদাধর॥
কেবা এ বালিকা আর কে জননী তাঁর।
পরে মন বিশেষিয়া কব সমাচার॥
অতি প্রিয় শ্রীপ্রভুর হৃদয়-বসতি।
এলে পরে হয় তথা বহুদিন স্থিতি॥
হরিভক্ত এইখানে বড়ই বিরল।
সংসারী বিষয় 'বাসে বিষয়ী সকল॥
তা সবার মধ্যে মাত্র দুই-একজন।
ভগবৎ-তত্ত্ব-কথা করে আন্দোলন॥
প্রভুসনে হরি-কথা আলাপন করি।
অন্তরে সবার খেলে আনন্দ-লহরী॥
কথোপকথন যার সঙ্গে একবার।
এমন মধুর আর নহে ভুলিবার॥
বঞ্চি কিছু দিন তথা আসিলেন ফিরে।
স্ববাসে শ্রীপ্রভুদেব কামারপুকুরে॥
স্বদেশ না লাগে ভাল যেন ছিল আগে।
গঙ্গাতীর দক্ষিণশহর মনে জাগে॥
যেই স্থানে শ্রীপ্রভুর আদি লীলাস্থল।
আসিতে তথায় সাধ হইল প্রবল॥
আগমন সত্বর হইল শ্রীপ্রভুর।
শুন রামকৃষ্ণ-কথা শ্রবণমধুর॥