দ্বিতীয় খণ্ড - বিবাহ
১
ক্রমে পরে শুনিলেন আই ঠাকুরানী।
প্রভুর কারণে হৈলা আকুল পরাণী॥
ছেড়ে গেছে জ্যেষ্ঠ পুত্র শ্রীরামকুমার।
শোক-তাপানলে হৃদি দহে অনিবার॥
তাহার উপরে এ কি ভীষণ বারতা।
বায়ুরোগে গদাই'র উন্মাদের কথা॥
যতেক মমতা স্নেহ তাঁহার উপর।
প্রাণের অধিক ছোট ছেলে গদাধর॥
সংবরিতে নারে শোক কাঁদে উচ্চরোলে।
তিতিল আগোটা বক্ষ নয়নের জলে॥
তখন আইল ধেয়ে পুত্র রামেশ্বর।
সংসারের ভার এবে যাঁহার উপর॥
কাঁদিতে কাঁদিতে আই কহিলেন তাঁরে।
ব্যবস্থা করিয়া ঘরে আন গদাধরে॥
সান্ত্বনা করিয়া মায়ে কহে রামেশ্বর।
রোদন সংবর তারে আনিব সত্বর॥
অল্পদিনমধ্যে তেঁহ করিল তাহাই।
আইর পরাণ ঠাণ্ডা পাইয়া গদাই॥
এখানে প্রভুর ভাব হইল স্বতন্তর।
কখন সুস্থিরতর কভু বহে ঝড়॥
সুস্থিরেতে হাসিখুশী প্রতিবাসী সনে।
হইত যেমন পূর্বে গ্রাম্য আলাপনে॥
বহিলে অন্তরে ঝড় নীরব গদাই।
সম্মুখে আসিলে কেহ কোন কথা নাই॥
রাত্রিদিন উদাসীন আপনে আপন।
ঘৃণা-লজ্জা-ভয়-হীন বাহ্য আচরণ॥
কানাকানি লোকজনে পরস্পর কয়।
উপদেবতার কর্ম অন্য কিছু নয়॥
সে হেতু আনিয়া ওঝা করে ঝাড়ফুঁক।
বসিয়া বসিয়া প্রভু দেখেন কৌতুক॥
ওঝার টোটকা ব্যর্থে সবে মুহ্যমান।
চণ্ড নামাইতে লোকে করিল বিধান॥
আসিয়া চণ্ডর ওঝা নির্ধারিত দিনে।
দেখিবারে উপনীত গ্রাম্য লোকজনে॥
পূজাবলি লয়ে চণ্ড হৈল অধিষ্ঠান।
যেইখানে দর্শকেরা আছে বিদ্যমান॥
ওঝারে ডাকিয়া চণ্ড বলিল এখনে।
পূজাবলি দিলে তুমি যাহার কল্যাণে॥
দেহে তার ভূত-স্পর্শ কিংবা নাই ব্যাধি।
অকারণ ঝাড়-ফুঁক অথবা ঔষধি॥
সম্বোধিয়া প্রভুদেবে চণ্ডর বচন।
ও গদাই, সাধু হ'তে এত যদি মন॥
সুপারি ভক্ষণ কেন এত পরিমাণে।
যাহাতে কামের বৃদ্ধি দেহমধ্যে আনে॥
সুপারি-ভক্ষণাভ্যাস অধিক তখন।
চণ্ডর আদেশে প্রভু কৈলা বিসর্জন॥
জপ-পূজা-স্বস্ত্যয়ন কল্যাণের তরে।
আচরেন আত্মীয়েরা প্রভু যাতে সারে॥
কিছুতেই নাহি হয় মনোমত হিত।
তেকারণ সকলেই সর্বদা চিন্তিত॥
এখানেতে প্রভুদেব আপনার মনে।
কখন ঠাকুরপূজা কখন শ্মশানে॥
কখন বসন থাকে শরীরে সংলগ্ন।
কখন বসনহীন অঙ্গ গোটা নগ্ন॥