দ্বিতীয় খণ্ড - বিবাহ
৫
ব্রাহ্মণীর নাম শ্যামা প্রভুর শাশুড়ী।
উদরে জনমে যাঁর জগত-ঈশ্বরী॥
বলিয়াছি কিছু আগে দেখ মনে ক'রে।
একবার প্রভুদেব হৃদয়ের ঘরে॥
জনেক গায়ক তথা গায় একদিন।
শুনে জুটে নর-নারী নবীন প্রাচীন॥
নারীদের মধ্যে এক কন্যা করি কোলে।
শুনে গান একসঙ্গে নারীদের দলে॥
একত্রিত যত সব চেনা পরস্পর।
প্রতিবাসী কাছে দূরে সেই গ্রামে ঘর॥
নিকটসম্বন্ধযুক্ত আপনা আপনি।
তাই তথা সমবেত পুরুষ-রমণী॥
অল্পবয়া শিশুমেয়ে কোলে ছিল যাঁর।
গীত-সমাপনে এক আত্মীয় তাঁহার॥
আদরে কহিলা বালিকায় সম্বোধিয়া।
এত লোক কারে চাহ করিবারে বিয়া॥
অমনি দেখান বালা তুলি দুই করে।
সন্নিকটে সমাসীন প্রভুগদাধরে॥
এই বালা গুরুমাত ব্রাহ্মণ-কুমারী।
জননী তাঁহার শ্যামা প্রভুর শাশুড়ী॥
ছিল জোড়া দিদি আই হেঁশেলের কাজে।
জামায়ের মিঠা স্বর হৃদিমাঝে বাজে॥
শুনি মুরলীর গান যেমন গোপিনী।
বাসরে আইল ধেয়ে দিদি ঠাকুরানী॥
দূর লাজ গেল খুলে মুখের বসন।
আপনা হারায়ে হেরে জামাতা-রতন॥
রূপের পুতুলি প্রভুদেব গদাধর।
যৌবন-প্রারম্ভ প্রায় পঁচিশ বৎসর॥
একে ত মুখের ঢাকা গেছে দিদি আই।
সামাল অঙ্গের বাস বিষম জামাই॥
জগজন-মন-চোরা প্রভু ভগবান।
গুপ্ত অবতার তাই পাইলে এড়ান॥
কেবা সমভাগ্যবতী ভুবন-ভিতরে।
উদরে ধরিলে যার ব্রহ্মাণ্ড উদরে॥
জামাই অখিলপতি ব্রহ্ম সনাতন।
ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশের পূজিত চরণ॥
ধন্য ধন্য দিদি আই প্রভু অবতারে।
ঈশ্বর বালিকাবেশে খেলে যাঁর ঘরে॥
বসাইয়া কোলে তাঁরে খাওয়াইলে মাই।
হীনের কি আছে সাধ্য স্বরূপত্ব গাই॥
জামাতা দুহিতা তব তাঁদের চরণে।
জন্ম জন্ম রহে মতি ভিক্ষা দেহ দীনে॥
শ্বশুর শাশুড়ী কিবা আত্মীয়-স্বজন।
কারে নাহি ধরা-ছুঁয়া দিলা ভগবান॥
মুগ্ধমন যতক্ষণ দেখে শুনে তাঁয়।
অন্তর হইলে পরে সব ভুলে যায়॥
ভুলিতে না পারে কিন্তু মূরতি সুন্দর।
পিক-পাখী-বীণা জিনি শ্রীকণ্ঠের স্বর॥
মরি কি মোহন কান্তি খেলে শ্রীবয়ানে।
বিশেষে ঈষৎ বাঁকা নয়নের কোণে॥
কি শোভা অধরে মৃদু সুহাসির খেলা।
কিবা ঠাম ধীর পদ-সঞ্চালন-বেলা॥
রূপের আকর প্রভু ঠাকুর গদাই।
বিধাতার তুলি-স্পর্শ শ্রীঅঙ্গেতে নাই॥
শিল্পকলা বিধাতার নাহি এতদূর।
আপনারে গঠিয়াছে আপনি ঠাকুর॥
ভুলাইতে জগজন তাদের কল্যাণে।
বিমোহিত যারা তুচ্ছ কামিনী-কাঞ্চনে॥
শুন রামকৃষ্ণ-লীলা অপূর্ব কথন।
ভব-সিন্ধু তরিবারে বাঞ্ছা যদি মন॥