দ্বিতীয় খণ্ড - বিবাহ
৪
জ্বালিয়া সাতাশ কাঠি বিবাহের কালে।
ঘুরে যবে বরে ঘেরে রমণীসকলে॥
জ্বালা কাঠি লাগিয়া কি হৈল শুন কথা।
পুড়ে গেল শ্রীপ্রভুর মাঙ্গলিক সুতা॥
হরিদ্রা-মাখান সুতা ছিল বাঁধা হাতে।
অপূর্ব প্রভুর খেলা দেখিতে শুনিতে॥
চিরশক্তি আপনার করিয়া গ্রহণ।
ছলে পুড়াইয়া দিলা অবিদ্যা বন্ধন॥
সমাপ্ত হইলে পরে শুভ পরিণয়।
কন্যা-কর্তা হইলেন ব্যস্ত অতিশয়॥
খাওয়াতে বরযাত্রী কন্যাযাত্রিগণে।
প্রথম খাইতে বসে যতেক ব্রাহ্মণে॥
দরিদ্র ব্রাহ্মণ ভাগমত এক ঘর।
রচিয়াছে নারীগণে তাহাতে বাসর॥
ভোজনের ঠাঁই হয় তাহার দুয়ারে।
দেখিয়া প্রভুর খেলা আত্মহারা করে॥
বিশ্বরানী মাতা বিশ্বেশ্বর শ্রীগোসাঁই।
জনম যাঁহার ঘরে তাঁর ঘর নাই॥
জীবন উপায় মাত্র রকমে রকমে।
গড়া হ'তে এত গুপ্ত সাধ্য কার চিনে॥
তথাপি সরলে কিছু নাহি লাগে ফের।
যে না বুঝে নর-লীলা তার তর্ক ঢের॥
কিংবা যেবা বলে হরি বিরাট আকার।
চৌদ্দপুয়া আধারেতে নহে ধরিবার॥
আপদ বিপদ দুঃখ কেঁদে কেঁদে বুলে।
জানে না সে লীলাতত্ত্ব লীলা কারে বলে॥
সর্বশক্তিমান যিনি শক্তির আধার।
প্রকাণ্ড সৃষ্টির সৃষ্টি সঙ্কেতে যাঁহার॥
সিন্ধু-বিন্দুমধ্যে যাঁর বিরাজের ঠাঁই।
আকার ধরিতে কহ কেন শক্তি নাই॥
প্রমাণ-প্রয়োগে তত্ত্ব নহে বুঝিবার।
বিশ্বাসে প্রত্যক্ষীভূত হন অবতার॥
দেখান যাঁহারে তেঁহ পায় দেখিবারে।
বিরাটেতে যেই বস্তু সেই সে আকারে॥
সবিশ্বাসে লীলাকথা শুন তুমি মন।
নিত্য লীলা দেখিবারে পাইবে নয়ন॥
বাসরে দেখিয়া প্রভু অনেক রমণী।
শুন কি হইল পরে অপূর্ব কাহিনী॥
নানাবিধ রমণীর নানারঙ্গ হেরে।
রঙ্গময়ী মার লীলা জাগিল অন্তরে॥
মা মা বলি হৈলা প্রভু ভাবাবেশান্বিত।
কোকিল জিনিয়া কণ্ঠে ধরিলেন গীত॥
যেমন কাঁদান গানে মোহিত নাগিনী।
সেইমত স্তব্ধীভূত পুরুষ-রমণী॥
পাতে হাত মুখে ভাত খেতে যারা ছিল।
পুতুলের প্রায় গান শুনিতে লাগিল॥
বাসরে রমণীগণ মোহিত অবাকে।
দেখে বরে নিরখিয়া অনিমিখ চোখে॥
ছিল মনে কত মত রঙ্গ করিবারে।
দেখে রঙ্গ রঙ্গ করা সব গেল উড়ে॥
শ্যামাগুণগানে প্রভু এত মত্ততর।
কোমরে কাপড় নাই প্রায় দিগম্বর॥
বাসর সাজায়েছিল যতগুলি নারী।
সবার চরণ-রজ মস্তকেতে ধরি॥
মহাধন্যা পুণ্যবতী মহা পূজ্যতর।
ল'য়ে হরগৌরী যারা সাজালে বাসর॥
যে যুগল-দরশনে বিরিঞ্চি অক্ষম।
আঁখির মিটায়ে সাধ কৈল দরশন॥
তবে কিনা কি দেখিল না বুঝে ব্যাপার।
বড় গুপ্ত এইবারে প্রভু অবতার॥