Prev | Up | Next

দ্বিতীয় খণ্ড - অনুরাগে কালীদর্শন

কৃপা কর ইষ্টগোষ্ঠী ঠেকিয়াছি দায়।
প্রভুর সাধন-কথা হৃদে না জুয়ায়॥
বড়ই সুগুহ্য কথা গুরুতম তত্ত্ব।
সুমূর্খ পামর নহে বর্ণিবার পাত্র॥
বিষম সমস্যা ইহা বিশেষে আমার।
কোথাও না পাই কিছু ঠিক সমাচার॥
কার পর কি করিলা প্রভু ভগবান।
চোখে দেখা যার সেও না বুঝে সন্ধান॥
জগৎ-জননী সিদ্ধিদাত্রী শ্যামা-সুতা।
লিখাইয়া দেহ মোরে সাধনার কথা॥
অভয়ে অভয়-পদ বলে বাঁধি ছাতি।
লিখি এ মহান কাণ্ড রামকৃষ্ণ-পুঁথি॥
থাকি কিছুদিন প্রভু কামারপুকুরে।
উপনীত হইলেন দক্ষিণশহরে॥
নিত্যকর্ম শ্যামা-সেবা করিতে করিতে।
বহিতে লাগিল বেগ শ্রীপ্রভুর চিতে॥
একাকী থাকেন প্রভু চিন্তায় মগন।
কখন থাকেন বসি যথা নিরঞ্জন॥
জাহ্নবীর তীরে কিংবা পঞ্চবটমূলে।
সতত মানুষে যেই দিকে নাহি চলে॥
নির্জনে ধ্যানের হেতু প্রভু নারায়ণ।
রোপিয়াছিলেন আগে তুলসী-কানন॥
গঙ্গাতীরে বিল্বমূলে পুরীর ভিতর।
এখন কাননে গাছ ডাগর ডাগর॥
বেড়া দিয়া ঘেরিবারে হৈল তাঁর মন।
করিবারে সেই স্থান অধিক নির্জন॥
বেড়ার যোগাড় কেবা করে হেন নাই।
তে কারণ চিন্তামগ্ন আছেন গোসাঁই॥
হেনকালে কি হইল শুন শুন মন।
প্রভু-রামকৃষ্ণ-কথা অমৃত-কথন॥
অদ্ভুত প্রভুর লীলা নহে বলিবার।
দেখিতে দেখিতে ডাকে গঙ্গাতে জুয়ার॥
সমাসীন প্রভুদেবে নিকটে দেখিয়া।
সোহাগে চরণোদ্ভবা উঠে উথলিয়া॥
প্রসারি সহস্র কর ঊর্মিমালা-ছলে।
আলিঙ্গিতে জন্মস্থান চরণযুগলে॥
রিক্তহস্ত নহে সঙ্গে কিবা উপহার।
ভক্তিসহ শুন কথা বিশ্বাস-ভাণ্ডার॥
বসিয়া দেখেন প্রভুদেব বটমূলে।
প্রয়োজন যাহা তাই ভেসে আসে জলে॥
এক তাড়া রলা কাষ্ঠ আসিছে বন্যায়।
ক্রমে অতি সন্নিকট প্রতিকূল বায়॥
বাগানেতে কর্ম করে মালী একজন।
ভর্তাভারী নাম তার প্রভুপদে মন॥
হেনকালে সেইখানে হৈল উপনীত।
অমৃত-লহরী রামকৃষ্ণ-লীলাগীত॥
শ্রীআজ্ঞা মালীরে তাড়া উঠাইতে কূলে।
যেন আজ্ঞা ভক্তমালী নামে গিয়ে জলে॥
গোটা তাড়া টানিয়া আনিল তীরে মালী।
দেখিল সমান মাপে কাটা রলাগুলি॥
পরিমাণে তিল-আধ ছোট-বড় নাই।
ঠিক যেন প্রয়োজন রলা ঠিক তাই॥
সংলগ্ন তাহাতে পুনঃ একতাল দড়ি।
কিমাশ্চর্য সঙ্গে এক ছুরিকা কাটারি॥
যথা আজ্ঞা ভক্তমালী আনন্দিত মনে।
বেঁধে দিল বেড়া সেই সব উপাদানে॥
কার্য-সমাপনে কিবা বিস্ময় নেহারি।
না বাঁচিল এক তিল কাষ্ঠ কিবা দড়ি॥
এই বেড়া-সুবেষ্টিত তুলসীর বন।
তার মধ্যে করিলেন ধ্যানের আসন॥
রাত্রিকালে এই স্থলে করিতেন ধ্যান।
কোনরূপে কেহ কিছু না জানে সন্ধান॥

Prev | Up | Next


Go to top