দ্বিতীয় খণ্ড - রামাৎ-সাধনা
১
রামকৃষ্ণলীলা-কথা শ্রবণমঙ্গল।
গাইলে শুনিলে করে চিত নিরমল॥
ভীষণ ত্রিতাপ পাপ বিঘ্ন বাধা দূর।
পায় সুশীতল জল যেবা তৃষাতুর॥
রামাৎ-সাধনে মন করিলেন স্থির।
দিবানিশি এক চিন্তা কোথা রঘুবীর॥
রাম ধ্যান রাম জ্ঞান রাম রত্নরাশি।
দূর্বাদলশ্যাম রাম কেবল প্রয়াসী॥
রামনাম অবিরাম বদনে বেরায়।
সচঞ্চল ভ্রাম্যমাণ হেথায় সেথায়॥
রামনামে কণ্ঠরোধ চক্ষে ঝরে জল।
বিরহযন্ত্রণা হৃদে এতই প্রবল॥
রামভক্ত সন্নিকটে রহে যে যেখানে।
সময় বুঝিয়া যান তা সবার স্থানে॥
শ্রীকৃষ্ণকিশোর নাম চাটুয্যে ব্রাহ্মণ।
দক্ষিণসহরে বাস রামপদে মন॥
রামায়ণ-পাঠ ঘরে হয় নিতি নিতি।
রামনাম-জপে যায় গোটা গোটা রাতি॥
শুনিয়া তাহার কথা প্রভু গুণাকর।
আসা-যাওয়া করিতেন ব্রাহ্মণের ঘর॥
রামের পরম ভক্ত করি দরশন।
করিলেন ব্রাহ্মণের চিত্ত আকর্ষণ॥
ব্রাহ্মণ বড়ই খুশী পেয়ে তাঁয় ঘরে।
অপার আনন্দ এত হৃদয়ে না ধরে॥
নবীন যুবক বয়ঃ তিরিশ বৎসর।
অনুরাগ-কান্তি-মাখা সর্বাঙ্গসুন্দর॥
ঢলঢল বাঁকা আঁখি সুঠাম মূরতি।
সমভক্তিমান তায় শ্রীরামের প্রতি॥
প্রাণেশ দিনেশ-করে কান্তি নিরমল।
অবশ হইয়া ফুটে কলিকা-কমল॥
ছড়াইয়া শতদল কেশরনিচয়।
প্রভুকে দেখিয়া তেন দ্বিজের হৃদয়॥
কভু অনিমিখে আঁখি করে দরশন।
অনুপম-রূপাকর প্রভুর বদন॥
ভক্তিমতী ব্রাহ্মণী গৃহিণী ঘরে তাঁর।
প্ৰভুরে করেন দোঁহে বাৎসল্য-আচার॥
সুমিষ্ট ভোজনদ্রব্য যবে যাহা জুটে।
প্রভুর কারণে অতি যতনে আকুটে॥
ভকতপরাণ প্রভুদেব দয়াময়।
ব্রাহ্মণীরে হইলেন বড়ই সদয়॥
যে বলে প্ৰভুরে চিনে রাম নারায়ণ।
মহাভাগ্যবতী সতী আরাধ্যচরণ॥
ব্রাহ্মণ যদ্যপি কভু মায়াবশে ভুলে।
নরজ্ঞানে প্রভুদেবে কোন কথা বলে॥
অমনি ব্রাহ্মণী কন আপন পতিরে।
ভ্রান্ত এত কিবা কথা কও তুমি কারে॥
চিনিতে না পারিতেছ কেবা এই জন।
বাহ্যরূপান্তরে সেই কৌশল্যা-নন্দন॥
ভাগ্যবান ভাগ্যবতী ব্রাহ্মণ ব্রাহ্মণী।
ভবনে বসিয়া পায় অখিলের স্বামী॥
কাতরে অধম করে মিনতি চরণে।
প্রভুপদে রহে মতি ভিক্ষা দেহ দীনে॥