দ্বিতীয় খণ্ড - রামাৎ-সাধনা
৪
পেয়ে প্রভু রামলালে পরম সুন্দর।
স্নেহেতে বিভোরচিত্তে সোহাগ আদর॥
লালন-পালন যত্ন হয় দিবারাতি।
ছাওয়ালে না পারে এত করিতে প্রসূতি॥
সোহাগে দুরন্ত বড় হৈল রামলালা।
রোদে ছুটে জল ঘাঁটে ধূলা মেখে খেলা॥
এ একপ্রকার জ্বালা এখানের নয়।
ভাবরাজ্যের ভাবুকের ভাব-ক্ষেতে হয়॥
মজার জ্বালার মিষ্টি কি কব তোমাকে।
ভিন্ন ভিন্ন ধর্ম সূর্যমণির আলোকে॥
একে বহে দাহ্য গুণ পরাণ বিকল।
মণির আলোকে করে প্রাণ সুশীতল॥
এখন প্রভুর নাই আরাম-বিরাম।
সর্বদাই ব্যতিব্যস্ত লয়ে বালরাম॥
এখন সমাধি নাই নাই ভাবাবেশ।
স্বহস্তে করেন নারিকেলের সন্দেশ॥
কত কথা কত রঙ্গ হয় তার সনে।
কভু ক্রোধাবিষ্ট কভু সস্নেহবচনে॥
দেখিয়া শুনিয়া লোকে বুঝে তার মর্ম।
বাতিক বায়ুর বেগ প্রাবল্যের ধর্ম॥
আইও তাহাই কন আচার দেখিয়ে।
ক্ষেপিলি কি সন্ন্যাসীর ঠাকুর লইয়ে॥
কখন বলেন আই হৃদয়ের কাছে।
গদায়ে আমার বুঝি পরীতে পেয়েছে॥
প্রভু বিনা অন্য কেহ দেখিতে না পায়।
রামলালা সঙ্গে তাঁর খেলিয়া বেড়ায়॥
এ এক রাজ্যের কথা এ রাজ্যের নয়।
বিমানেতে স্থিতি ভিত্তি নিত্য নিত্য রয়॥
আলম্বনশূন্য সেটি ঝুলে আসমানে।
হইলেও নিকটস্থ দূরবর্তী স্থানে॥
ভাবী বিনা অন্যে নাহি দেখিবারে পায়।
বিষম হেঁয়ালি কথা না আসে মাথায়॥
নাহি তথা বাহ্য রূপ-রসাদির গন্ধ।
রোষ দ্বেষ আদি করি অরাতির দ্বন্দ্ব॥
নাহি তথা স্থূল বাহ্য ভৌতিক ব্যাপার।
নাহি চন্দ্র নাহি সূর্য মালা তারকার॥
আছে তথা ভাব লক্ষ্য সঙ্গে এক মন।
আছে সংস্কার অরি প্রতিদ্বন্দ্বিগণ॥
রথ অস্ত্র বিনা আছে অনন্ত সমর।
তার পারে পুরী আছে অতীব সুন্দর॥
বিনা চন্দ্রে বিনা সূর্যে পুরী জ্যোতির্ময়।
পুরীর শোভার কথা কহিবার নয়॥
আছে এক রত্নবেদী অতি অলৌকিক।
তদুপরি জ্বলে এক অমূল্য মানিক॥
নানান বর্ণের জ্যোতি রূপ উঠে তার।
এক এক বর্ণরূপে বিভিন্ন আকার॥
দেখিলে সে কেহ আর পালটিতে নারে।
ডুবে যায় অপরূপ রূপের পাথারে॥
এ হেন রাজ্যের রাজ্যেশ্বর অবতার।
অনুক্ষণ প্রিয় রাজ্যে বিলাস-বিহার॥
কেমনে বুঝিব মোরা এ রাজ্যের কথা।
যে কবে বলিব তার বিকারের মাথা॥
তাই প্রভু আমাদের দৃষ্টিতে কেবল।
একজনা ঘোর বদ্ধ উন্মত্ত পাগল॥
ধূলা দিয়ে জগতের চক্ষের উপর।
রঙ্গভূমে করে রঙ্গ রঙ্গের ঈশ্বর॥
অত্যাশ্চর্য ভাবরাজ্য প্রভুর বিদিতি।
বালরামে লয়ে হৈল বাৎসল্যের ইতি॥
সাধনাসহায়ে প্রভু দেখিবারে পান।
এই বালকের অঙ্গে সৃষ্টি শোভমান॥
বালরামময় সৃষ্টি আর নাহি কেহ।
ভাবাতীত একা ভূমি সম্মিলনী-গৃহ॥