দ্বিতীয় খণ্ড - হলধারীর সঙ্গে রঙ্গ ও মথুরকে শিবকালী-রূপ-প্রদর্শন
১
জ্যেষ্ঠ খুল্লতাত-ভাই দাদা হলধারী।
তাঁর সঙ্গে শ্রীপ্রভুর লীলা রঙ্গ ভারি॥
বড় রহস্যের কথা বড়ই রগড়।
দীক্ষা শিক্ষা তাঁর মধ্যে অতীব সুন্দর॥
শুদ্ধাচারী হলধারী সাধক সজ্জন।
ভাগবত গীতাদি অধ্যাত্ম রামায়ণ॥
বেদান্তেরও ভাব-মর্ম ভালরূপে জানা।
নানাবিধ দেবকার্যে বিজ্ঞ একজনা॥
বাল্যকাল একসঙ্গে স্বদেশে যাপন।
যৌবনে পূজক-কর্মে এখানে মিলন॥
পুরীতে কাটিল কাল সাত বর্ষ প্রায়।
কতই ঘটনাবলী কহনে না যায়॥
হইল প্রত্যক্ষীভূত লোচন-সকাশ।
তথাপি প্রভুতে নাহি উপজে বিশ্বাস॥
পরিচয়ে শুন কথা অতীব মধুর।
ভাবাতীত ভক্ত ভাবী লীলার ঠাকুর॥
বসিতেন স্বতঃসিদ্ধ অনুরাগভরে।
জগমাতা অম্বিকায় পূজিবার তরে॥
আপনে আপুনি প্রভু হইয়া বিভোর।
বিগলিত দর দর নয়নেতে লোর॥
আবেশেতে বাহ্যহারা জড়বৎ প্রায়।
অপরূপ কান্তিছটা বদনে বেরায়॥
প্রত্যক্ষ করিয়া হলধারী মনে করে।
নিশ্চয় ঈশ্বরাবেশ ইহার ভিতরে॥
হইলে ভাবের ভঙ্গ প্রভুদেবে কয়।
এবারে তোমারে ভায়া বুঝেছি নিশ্চয়॥
এবারে গিয়াছে মোর আঁখি-ধাঁধা ভ্রম।
ফাঁকি দিতে আর নাহি হইবে সক্ষম॥
দেখেছি ঈশ্বরাবেশ তোমার ভিতরে।
এত শুনি প্রভুদেব কহিলা তাঁহারে॥
দেখা যাবে মতি স্থির রাখহ কেমনে।
গোলযোগ আর যেন নাহি হয় ভ্রমে॥
অনন্তর দেবসেবা-কার্যাদির শেষে।
বসিলেন হলধারী মনের হরিষে॥
অতি প্রিয় নস্যপাত্র ল'য়ে আপনার।
করিবারে শাস্ত্রাদির তত্ত্বের বিচার॥
হেনকালে প্রভুদেব উপনীত তথা।
দাঁড়িয়া শুনেন তত্ত্ববিচারের কথা॥
কিছু পরে দাদারে কহেন গুণমণি।
পড়েছ যে সব শাস্ত্র আমি তাহা জানি॥
বিদ্যা-অভিমানী দাদা নস্য নাকে দিয়ে।
গ্রীবোন্নত সহ চক্ষু বিস্তার করিয়ে॥
গরজি গম্ভীর স্বরে প্রভুদেবে কন।
বুঝিস কি তুই গণ্ডমূর্খ একজন॥
নিজ দেহ দেখাইয়া প্রভুর উত্তর।
সে দেয় বুঝায়ে যে ইহার ভিতর॥
এই কিছুক্ষণ আগে তুমিই কহিলে।
ঈশ্বরের আবির্ভাব আছে এই খোলে॥
অধিক গম্ভীরভাবে কহে আর বার।
কল্কি ছাড়া কলিতে কি আছে অবতার॥
পাগল উন্মত্ত তুই হয়েছিস এবে।
তাই নিস আপনাকে অবতার ভেবে॥
তবে মৃদুমন্দ হাসি শ্রীপ্রভুর বোল।
এই যে বলিলে আর নাহি হবে গোল॥
বুঝেছ জেনেছ মোরে গেছে আঁখি-ভ্রম।
তবে এবে অন্যরূপ কহ কি কারণ॥
তখন কে আর দেয় সে কথায় কান।
সজোরে উঠেছে ঘটে বিদ্যা-অভিমান॥
দাস্যভাবে রামাৎ-সাধনে তারপর।
বস্ত্রহীনে মূত্রত্যাগ গাছের উপর॥
দেখিয়া তখন দাদা বুঝেছে প্রমাদ।
বায়ুরোগে গদাধর দুরন্ত উন্মাদ॥