দ্বিতীয় খণ্ড - যোগ-সাধন
৮
দুই-তিন দিনমধ্যে সিদ্ধ যোগিবর।
হইলেন উদরের পীড়ায় কাতর॥
রক্ত-আমাশয়-পীড়া জীর্ণ শীর্ণ কায়।
যন্ত্রণায় ভূমিতলে গড়াগড়ি যায়॥
রকম রকম খায় কতই ভসম।
কিসেও না হয় কিছু পীড়া-উপশম॥
হরদম ল'য়ে লোটা যায় ছুটে ছুটে।
শরীর ধনুকখানি বাম হাত পেটে॥
যন্ত্রণায় একদিন বড়ই অস্থির।
স্থিরতর কৈল দিবে ছাড়িয়া শরীর॥
সুরধুনীজলে মগ্ন মরণ-উপায়।
জ্ঞানশূন্য সিদ্ধযোগী নামিল গঙ্গায়॥
প্রভুর ইচ্ছায় যোগিবর যায় যত।
কোথাও না পায় জল ডুবিবার মত॥
পাতালপরশী জল গঙ্গার মাঝারে।
তোতার নাহিক উঠে হাঁটুর উপরে॥
ভিতরে কৌশল কিবা ভাবিয়া না পাই।
কে বুঝিবে কিবা কল করিলা গোসাঁই॥
বিফল প্রয়াস দেখি সিদ্ধ যোগিবর।
কাঁদিতে কাঁদিতে আসে প্রভুর গোচর॥
কহিল তাঁহারে কত করিয়া মিনতি।
কেমনে আরোগ্য হই করহ যুকতি॥
দয়া করি প্রভুদেব উত্তরিলা তায়।
আরোগ্য যদ্যপি কর প্রণাম শ্যামায়॥
শুনা মাত্র চলিলেন শ্যামার মন্দিরে।
কর জুড়ি সাষ্টাঙ্গে প্রণাম তোতা করে॥
ফিরে আসি দেখিলেন আর নাহি ব্যাধি।
শক্তিতে বিশ্বাস তাঁর হৈল তদবধি॥
ব্যাপারে বিস্ময়াপন্ন তোতা যোগিরাজ।
মুখে নাই কোন বাক্য কানে করে কাজ॥
এতদিনে পূর্ণজ্ঞান হৈল তোতার।
প্রাণে প্রাণে বুঝিলেন যিনি নিরাকার॥
নির্গুণ অরূপা নাম অনন্ত অখণ্ড।
তিনিই বিরাটরূপে অনন্ত ব্রহ্মাণ্ড॥
ক্রিয়াহীনে ব্রহ্মবাচ্য ক্রিয়াযুক্তে শক্তি।
একভাবে জ্ঞানরূপ অন্য ভাবে ভক্তি॥
একের অবস্থাভেদে বিপরীত রীতি।
নির্গুণে পুরুষ আর সগুণে প্রকৃতি॥
নব চক্ষু পেয়ে গেছে সব সন্দ ঘুচে।
একে দেখে লক্ষ কোটি মহানন্দে নাচে॥
রূপের কথায় আগে ছিল উপহাস।
এখন যা কন প্রভু করেন বিশ্বাস॥
পুরীমধ্যে দিনত্রয় থাকিবার কথা।
একাদশ মাস এবে গত হৈল হেথা॥
প্রভুর মাহাত্ম্যকথা কি কহিব মন।
কহিলেও কোটি কোটি তবু কোটি কন॥
বিশুষ্ক জ্ঞানের কাণ্ড কেবল বিচার।
রীতি ধরা সুর সেই একই প্রকার॥
গম্ভীর গম্ভীর গতি নীরস নীরস।
তিল মাত্র নাই রাগ-রাগিণীর রস॥
আছিল বিশুদ্ধ যোগী জ্ঞান প্রখরায়।
এবে প্রভুসঙ্গগুণে প্রভুর কৃপায়॥
মধুর সরস এবে মিঠানি মিঠানি।
হৃদয়বীণায় বাজে ভক্তির রাগিণী॥
একদিন বীণাকণ্ঠ প্রভু গুণধর।
শ্যামাগুণ-গীত গান তোতার গোচর॥
ভাবেতে বিভোর তোতাপুরী যোগিবর।
গণ্ড বেয়ে অশ্রু ঝরে বক্ষের উপর॥
কোথায় আছিল তোতা এখন কোথায়।
ভাবরাজ্যেশ্বর প্রভু তাঁহার কৃপায়॥
রামকৃষ্ণ-গুণগীতি শ্রবণমঙ্গল।
শ্রবণ-কীর্তনে মিলে ভক্তি নিরমল॥