দ্বিতীয় খণ্ড - মধুরভাবে সাধনা
১
রামকৃষ্ণ-লীলাকথা গাইলে শুনিলে।
সাধন-ভজনহীন হেন কলিকালে॥
অনায়াসে মিলে সুদুর্লভ ভক্তিধন।
হেলায় টুটিয়া যায় ভবের বন্ধন॥
অকূল-সাগর-পার দেশদেশান্তরে।
নিজ প্রয়োজনে যদি কোন জন ফিরে॥
মন-মুগ্ধ বিজাতীয় দ্রব্যাদি রকম।
নিত্যই কতই শত করে দরশন॥
নূতন নূতন সঙ্গে দিবানিশি বাস।
তথাপি বিদেশী দুঃখে সুদীর্ঘ নিঃশ্বাস॥
নিঃশ্বাসে নিঃশ্বাসে ছাড়ে বদন মলিন।
ভাবে কবে পাবে পুনঃ জনম-জমিন্॥
সেইরূপ প্রভুদেব নানা অবস্থায়।
পতিত যদিও তবু না ভুলেন মায়॥
নানান সাধনে নানা মূর্তি আরাধনা।
সাধনান্তে সেই নাম শ্যামা শ্যামা শ্যামা॥
শ্যামার আনন্দময়ী পরমা মূরতি।
সমভাবে হৃদে তাঁর জাগে দিবারাতি॥
মা মা বোল অবিরত ফুটে শ্রীবদনে।
শ্যামা সকলের মূল ষোল আনা মনে॥
কখন রমণীবেশ ধরিয়া আপুনি।
সখীভাবে সেবিতেন জগৎ-জননী॥
কখন শ্যামায় হয় চামরব্যজন।
কখন প্রদান পদে বিল্ব সচন্দন॥
মনেতে উদয় তাঁর যে ভাব যখন।
জীবের অবোধ্য সেইমত আচরণ॥
বুঝিতেন শ্যামা মায় সকলের সার।
যাবতীয় মূরতির শ্যামাই আধার॥
শ্যামা তুষ্টে সব তুষ্ট তবে সিদ্ধ কাজ।
সর্ব ঘটে এক শ্যামা করেন বিরাজ॥
সাকারা আকারহীনা অনন্ত অদ্ভুত।
যত অবতার শ্যামা-সিন্ধুর বুদ্বুদ॥
কুলকুণ্ডলিনী শ্যামা দ্বার দিলে ছেড়ে।
তবে জীব যেতে পারে ইষ্টের গোচরে॥
শ্যামা গৃহ শ্যামা গৃহী শ্যামা রাজা রানী।
দ্বারিরূপে দ্বার রক্ষা করেন আপুনি॥
শ্যামা সুপ্রসন্না অগ্রে না হইলে পরে।
নঙ্গর ফেলিয়া জীব দাঁড় টেনে মরে॥
মহাশক্তি রাখে যদি প্রচ্ছন্ন মায়ায়।
কোন্ কালে কোন্ বলে কে চৈতন্য পায়॥
বরাবর তাই প্রভু প্রভু-অবতারে।
নিজে ভজি দিলা শিক্ষা শক্তি ভজিবারে॥
শ্রীপ্রভুর লীলাকাণ্ড রত্নের আকর।
নানা ধর্মভাব মর্ম ইহার ভিতর॥
রুচিপ্রিয় যাবতীয় সকলই মিলে।
একা রামকৃষ্ণলীলা-সাগরে ডুবিলে॥