দ্বিতীয় খণ্ড - মধুরভাবে সাধনা
২
অতুল ব্রজের ভাব অবোধ্য বারতা।
সুরের অজ্ঞাত তত্ত্ব নরের কা কথা॥
মায়া-বিরহিত পরিশুদ্ধ নির্বিকার।
স্বার্থগন্ধ-পরিশূন্য ভাব শ্রীরাধার॥
অতীব সুগূঢ় তত্ত্ব অতি দুরজ্ঞেয়।
রাধাই আধার তার রাধাই আধেয়॥
রূপ-রস-গন্ধ-আদি বিষয়বিমুখ।
নিত্যসিদ্ধ আত্মারাম ব্যাস-পুত্র শুক॥
ব্রহ্মর্ষি নারদঋষি আদি মুনিগণ।
পুরাণে বহুলভাবে করেছে কীর্তন॥
আসক্তি-সম্বল জীব স্বার্থগতপ্রাণ।
ধরিতে ইহাতে নারে কহে কি পুরাণ॥
শুদ্ধসত্ত্বাধারে প্রেমঘন মূর্তি ধরি।
জীবে দিতে পরতত্ত্ব নিজে ব্রজেশ্বরী॥
বার বার অবতীর্ণ লীলার প্রাঙ্গণে।
সম্বল সমর্থ প্রেম সাধ্যের তোষণে॥
এই যে মধুরভাব নিজস্ব রাধার।
ষোল আনা পরিপূর্ণ তাঁর অধিকার॥
অন্য অন্য গোপিকার চারি-পাঁচ আনা।
একান্ত সেবিকা যারা রাইগতপ্রাণা॥
জগজনে যে প্রতিমা জানা রাধা নামে।
বিবাহিতা আয়ানের বাস বৃন্দাবনে॥
জটিলে কুটিলে যাঁর শাশুড়ী ননদী।
কৃষ্ণ-বিরাগিণী কৃষ্ণনামে প্রতিবাদী॥
কুলাদি সর্বস্বহারা কৃষ্ণের কারণ।
কৃষ্ণকলঙ্কিনী নাম অঙ্গের ভূষণ॥
মূল স্বরূপত্ব তাঁর না জানিলে পরে।
অধিকারী নহে ব্রজলীলা শুনিবারে॥
ভূতের যেখানে নাই প্রবেশাধিকার।
রূপ-রস-গন্ধাদির সাগরের পার॥
অতীন্দ্রিয় রাজ্য যাহা পুরাণে কীর্তিত।
ব্রজভাবচন্দ্র হয় সেখানে উদিত॥
রূপ-রসে মত্ত মন অভাবে বিষাদ।
শুনে যদি ব্রজলীলা করে অপরাধ॥
অচ্যুতের লীলামৃত শ্রবণ-মঙ্গল।
জৈবভাবাপন্ন শুনে পায় হলাহল॥
শ্রীকৃষ্ণ অদ্বৈতভাবে ক্রিয়াগুণ-হীন।
কৃষ্ণশক্তি রাধা থাকে তাহাতে বিলীন॥
দুঁহু-সঙ্গে দোঁহাকার এত প্রেম-প্রীতি।
এক ভিন্ন দুই আর না হয় প্রতীতি॥
এই প্রেমপ্রীতি করিবারে আস্বাদন।
এক হয়ে দুঁহু কৈলা লীলার পত্তন॥
বৃন্দাবনে প্রেমঘন মূর্তি দোঁহাকার।
উভয়ে বিশুদ্ধ সত্ত্ব ত্রিগুণের পার॥
ইহা না জানিয়া ব্রজলীলা শুনে যদি।
মঙ্গল দূরের কথা হয় অপরাধী॥