দ্বিতীয় খণ্ড - ইসলাম-সাধন
২
জাতিতে ক্ষত্রিয় নাম শ্রীগোবিন্দ রায়।
সন্নিকটে দমদমা বসতি তথায়॥
পারসী আরবী ভাষা বিশেষিয়া জানা।
ঈশ্বরানুরাগী ভক্ত তত্ত্বান্বেষী জনা॥
নানাধর্ম-আলোচনা তত্ত্বলাভেচ্ছায়।
নির্ণয় করিতে তার নিজের উপায়॥
নিত্যই কোরাণগ্রন্থ-পাঠ মনোযোগে।
সুফী দর্বেশের মত মিষ্টতর লাগে॥
এ পথ কেবলমাত্র ভক্তি-প্রেমে ভরা।
ভাবিলে ভাবুক ফুটে ভাবের ফুয়ারা॥
হিন্দু-মতে পঞ্চভাবে যেন উপাসনা।
ভাবের পসরা শিরে ভাব-বেচা-কেনা॥
হেথাও ভাবের খেলা সেই মত ঠিক।
মনোমত গোবিন্দের গোবিন্দ প্রেমিক॥
তাই ইসলামীয় ধর্ম করিয়া গ্রহণ।
নিভৃতে নির্জনে করে তাহার সাধন॥
ঈশ্বরানুরাগী যারা তারা এক জাতি।
হইলেও বিভিন্ন ধর্ম একই প্রকৃতি॥
হোক না যে কোন ধর্ম জানিহ নিশ্চয়।
ভক্তি-অনুরাগ-বিনে কিছু নাহি হয়॥
ভক্তি অনুরাগ যেন মহা ঝঞ্ঝাবাত।
বিধি-নিষেধের থেকে অনেক তফাত॥
কুল-শীল-অভিমান কোথা যায় উড়ে।
থাকে মাত্র এক লক্ষ্য চক্ষের উপরে॥
সরলবিশ্বাস-সহ ভাবিয়া উপায়।
যদ্যপি কখন কেহ ধর্মান্তরে যায়॥
তাহাতে তাহার নাহি হয় কোন ক্ষতি।
বরঞ্চ চরমে করে পরম উন্নতি॥
দৈবের ঘটনা কিবা দক্ষিণশহরে।
উপনীত শ্রীগোবিন্দ পুরীর ভিতরে॥
আনন্দের সীমা নাহি দেখি রম্য স্থান।
দেবালয় সাধুশালা ফুলের বাগান॥
নিরজন পঞ্চবটী ভাগীরথী-কূল।
একত্রিত যাবতীয় সাধনানুকূল॥
ভিক্ষান্ন সহজ-সাধ্য রানীর ভাণ্ডারে।
সবধর্মপন্থী পায় সমান আদরে॥
গোবিন্দ করিল থানা দেখি মনোমত।
আপনার কর্মে রহে নিরন্তর রত॥
চুম্বকের সঙ্গে যেন সম্বন্ধ লোহার।
সরল বিশ্বাসে তেন ঠাকুর আমার॥
সরলতা-বিশ্বাসে প্রিয় প্রভুরায়।
আপুনি হাজির নিজে গোবিন্দ যেথায়॥
প্রেমিক গোবিন্দ দেখি পরম আনন্দ।
আলাপনে আলোচনা ধর্মের প্রবন্ধ॥
ঠাকুর করেন চিন্তা আপনার মনে।
ইসলামীর পথ এক পথের বিধানে॥
ভাবেশ্বরী লীলাময়ী এই পথ দিয়ে।
দেন কত সাধকের বাঞ্ছা পুরাইয়ে॥
মায়ের শ্রীপাদ-পদ্ম-লাভ এই পথে।
কিরূপে কেমনে হয় মানস দেখিতে॥
এত বলি গোবিন্দকে দীক্ষা-গুরু করি।
সাধনা করেন প্রভু ধর্মবিধি ধরি॥