দ্বিতীয় খণ্ড - ইসলাম-সাধন
৩
একমাত্র আল্লা-মন্ত্র অহোরাত্র জপে।
গমন না হয় মার মন্দির-তরফে॥
দেব কি দেবীর নাম ফুটে না বদনে।
বাহিরে বাহিরে বসি এখানে সেখানে॥
পরিধান-ধুতি নাই কাছা আঁটা তায়।
হাবভাব কথাবার্তা যবনের প্রায়॥
যবন-রন্ধন-ঘ্রাণ আস্বাদনে সাধ।
মথুর দেখিল একি হৈল পরমাদ॥
নানামতে প্রভুরে বুঝান সংগোপনে।
যবনের রান্না বাবা খাইবে কেমনে॥
শ্রীপ্রভু বলেন খানা রাঁধিবে যখন।
সানকি বদনা ল'য়ে করিব ভক্ষণ॥
পিয়াজ-রসুন-গন্ধ ছাড়িবে খানায়।
পাইলে এমন গন্ধ তৃপ্তি হবে তায়॥
পুনশ্চয় প্রভুদেবে বুঝাইয়া কন।
ব্রাহ্মণে যদ্যপি করে সেরূপ রন্ধন॥
তাহাতে না হবে কোন ক্ষতি আপনার।
ভাল বলি প্রভুদেব করিলা স্বীকার॥
তখনি আনায় এক পাচক ব্রাহ্মণ।
যাবনিক সূপকর্মে বিজ্ঞ বিলক্ষণ॥
তফাতে দেখেন রান্না প্রভু ভগবান।
হিন্দুমতে পাচকের ধুতি পরিধান॥
মথুরে ডাকায়ে প্রভু কন অন্তরালে।
ব্রাহ্মণে বলহ যেন রাঁধে কাছা খুলে॥
প্রভুর সাধনা শিক্ষা বুঝা কেন ভার।
বিশেষিয়া বলিবারে কি শক্তি আমার॥
যত বার অবতার ভিন্ন ভিন্ন যুগে।
হইলেন ভগবান এবারের আগে॥
প্রতি বারে ভাব কর্ম একৈক রকম।
রামকৃষ্ণ-অবতারে সব বৈলক্ষণ॥
যাবতীয় জাগতিক বর্ণের মেলানি।
একা দিনকর-কর সকলের খনি॥
যে বরণ দিনেশ-কিরণে নাহি মিলে।
যে বরণ নামে সত্তা নাই কোন কালে॥
সেইমত বুঝ প্রভুদেব-অবতার।
অদ্যাবধি যত রূপ সবার আধার॥
সব বর্ণ সব রূপ সমভাবে বহে।
একরূপে বহুরূপী শ্রীপ্রভুর দেহে॥
যেবা হিন্দু-শিরোমণি ধর্ম যার প্রাণ।
সে দেখে প্রভুরে তার হরি ভগবান॥
কেহ বা পুরুষ দেখে কেহ বা প্রকৃতি।
বিভিন্ন বিভিন্ন ভাবে বিভিন্ন মূরতি॥
ধর্মান্তরে মুসলমান দেখে আলাহিদা।
মহান্ পুরুষ তার ত্রাতা পাতা খোদা॥
ভিন্নধর্ম-অবলম্বী খ্রীষ্টান যবন।
দয়াময় সেই যীশু করে দরশন॥
পশ্চাৎ পাইবে পূর্ণ পরিচয় তার।
একাধারে প্রভু সর্ব রূপের আধার॥