দ্বিতীয় খণ্ড - স্বদেশ-যাত্রা
১৪
শিয়ড়েতে বহুদিন গত হ'লে পর।
প্রভুর পড়িল মনে দক্ষিণশহর॥
বহুদূর তথা হ'তে দুদিনের পথ।
পথের কাহিনী শুন শুনেছি যেমত॥
হৃদুসঙ্গে পথিমধ্যে ভোজনের কালে।
উপনীত হইলেন এক পান্থশালে॥
স্নানান্তে খাওয়ায়ে জল প্রভুগুণধামে।
হৃদয় রন্ধন করে পরম যতনে॥
হৃদু ভাল জানে যাহা ভোজ্য রুচিকর।
কে আর কোথায় হেন সেবক সুন্দর॥
সামান্য সে চটি ভাল দ্রব্য নাহি জুটে।
ভাল যা পাইল তাই আনিল আকুটে॥
ভাত ডাল তরকারি হইল সকল।
সর্বশেষে রাঁধে চুনা মাছের অম্বল॥
প্রস্তুত করিয়া অন্ন হৃদু ডাকে তাঁরে।
নাচিতে নাচিতে যান ভাত খাইবারে॥
বালকস্বভাব প্রভু বালক প্ৰকৃত।
যখন খেয়াল যেন কার্য সেইমত॥
অথচ সকলে আছে সুগুহ্য ব্যাপার।
মম অধিকারে নাই সে সব বিচার॥
অম্বলেতে চুনা মাছ করি দরশন।
বলিলেন আর মম হবে না ভোজন॥
পোনামাছ বিনা আজ ভাত নাহি খাব।
বরঞ্চ আগোটা দিন উপবাস রব॥
শিশু হ'তে শিশুসম বিষম রগড়।
ধরিয়া শালার খুঁটি ঘুরে নিরন্তর॥
প্রভুরে বুঝান হৃদু সাধ্য-অনুসারে।
ততই ঘুরেন তিনি খুঁটি এঁটে ধ'রে॥
ঘুরিতে ঘুরিতে মাঝে মাঝে হয় নাচ।
সেই এক বোল মুখে খাব পোনামাছ॥
খেয়াল না যাবে হৃদু বুঝিয়া আপনে।
বাহির হইল পোনামাছ-অন্বেষণে॥
সেবক হৃদুর মত খুঁজিয়া না পাই।
এত আবদার যারে করেন গোসাঁই॥
ভিক্ষুকের মত হৃদু দ্বারে দ্বারে ফিরে।
শেষে উপনীত এক গৃহস্থের ঘরে॥
বিয়া হেতু অনেক লোকের সমাগম।
গৃহস্বামী যেবা তারে কৈল নিবেদন॥
সমস্ত বৃত্তান্ত শুনি গৃহী ভাগ্যবান।
হৃদয়ে করিল এক গোটা মাছ দান॥
তুষ্ট হ'য়ে মাছ ল'য়ে ত্বরিত গমন।
মনোমত পান্থশালে করিল রন্ধন॥
তাড়াতাড়ি ভোজন করিতে হৃদু কয়।
দেরি হ'লে চ'লে যাবে গাড়ির সময়॥
অতি সন্নিকটে তার রেল-ইষ্টেশান।
সময়ে না গেলে গাড়ি করিবে পয়ান॥
কলিকাতা-অভিমুখে যেতে সেই দিনে।
নাহিক দোসরা গাড়ি এক গাড়ি বিনে॥
ঠিক সময়েতে যেতে না পারিলে তথা।
সে দিন না হবে আর আসা কলিকাতা॥
সেই হেতু প্রভুদেবে বিহিত বুঝান।
স্বমনে ভোজন বাক্যে নাহি যায় কান॥