দ্বিতীয় খণ্ড - তীর্থ-পর্যটন
৫
পথিমধ্যে এক ঠাঁই বিস্তৃত প্রান্তরে।
অনাথ দরিদ্র বহু লোক বাস করে॥
পত্রের কুটীর বাঁধা তাও দুলে বায়।
তরুতলস্থিত সেই হেতু রক্ষা পায়॥
অন্ন বিনা জীর্ণ-শীর্ণ রুগ্নকলেবর।
অনায়াসে গোনা যায় বুকের পাঁজর॥
পরিধেয় শতগ্রন্থি মলিন বসন।
এত খাট তাও নহে লজ্জা-আবরণ॥
মূর্তিমান দরিদ্রতা তথা বিদ্যমান।
দেখিয়া দয়াল প্রভু করুণানিধান॥
রোদন করেন কত নাহিক অবধি।
গদগদ স্বরে কন শ্যামায় সম্বোধি॥
ত্রিলোকপালিনী তুমি তুমি বিশ্বেশ্বরী।
কি বিচার মা তোমার বুঝিতে না পারি॥
তোমার কর্মের মর্ম বুঝা অতি ভার।
কারও ভাতে দুধ চিনি নানা উপচার॥
অন্ন বিনা কেহ শীর্ণ দড়িবাটে আঁতে।
দিনান্তেও এক মুঠা নাহি পায় খেতে॥
দীনবন্ধু প্রভুদেব কাঙালের ধন।
অহেতুক কৃপানিধি দারিদ্র্যভঞ্জন॥
অনাথের নাথ প্রভু দ্রবিয়া অন্তরে।
ধীরে ধীরে বলিলেন ভক্ত শ্রীমথুরে॥
কখন না দেখি শুনি কাঙালী এমন।
যথাসাধ্য কর অন্ন-বস্ত্র বিতরণ॥
এদের মতন দুঃখী নাহি ত্রিসংসারে।
বলিতে বলিতে জল দু'নয়নে ঝরে॥
দুঃখী-দীনে যদি তব না দ্রবে অন্তর।
কি হেতু কহিবে জীবে দয়ার সাগর॥
জয় জয় দীনবন্ধু কাঙালের হরি।
যে দীনে উপজে দয়া তারে নমঃ করি॥
যে তোমার দয়াপাত্র সে কিসে কাঙালী।
সার্থক জীবন তায় রত্নবান বলি॥
যে যে কাঙালীকে দেখি শ্রীনয়নে বারি।
জনে জনে তে সবার পদযুগ ধরি॥
কাঙালীর বেশমাত্র কাঙালী কেমনে।
ভাগ্যবান সুরপূজ্য এবে ধরাধামে॥
অমূল্য শ্রীপাদপদ্ম দরশন-আশে।
বিরলেতে করে বাস কাঙালীর বেশে॥
মনোবাঞ্ছা পূর্ণ আজি শ্রীপ্রভু দুয়ারে।
অন্ন-বস্ত্রদান-হেতু কহিলা মথুরে॥
মথুর তাহাই করে যে আজ্ঞা যখন।
জানি না এবারে তেঁহ বুঝিল কেমন॥
উত্তরে প্রভুর প্রতি ভক্তবর কয়।
কোথা পাব এত অর্থ বহু হবে ব্যয়॥
দয়ালস্বভাব তুমি দয়ার সাগর।
পরদুঃখে দ্রবে তব করুণ অন্তর॥
এত দরিদ্রের দুঃখ করিতে মোচন।
কোথায় পাইব বাবা রাশি রাশি ধন॥
তুমি নাহি জান বাবা অর্থের মরম।
তাই কহ করিবারে এ হেন করম॥
ঠাকুর ঈষৎ কষ্টে কন আর বার।
রাজেশ্বরী মাতা সৃষ্টি তাঁহার ভাণ্ডার॥
নিজস্ব কাহারও নাই এক কড়া কড়ি।
যার কাছে ধন সেই মায়ের ভাণ্ডারী॥
মায়ের ভাণ্ডারী মাত্র তুমি একজন।
আজ্ঞা তাঁর কর অন্ন-বস্ত্র বিতরণ॥
ওরে শালা আমি তোর কাশী নাহি যাব।
অনাথ কাঙালী এরা এইখানে রব॥
এত শুনি শ্ৰীমথুর কহিল তখন।
অবশ্য করাব বাবা কাঙালী-ভোজন॥
অবিলম্বে পাঠাইল পত্রিকা ভবনে।
প্রেরণ করিতে বস্ত্র বস্তা বস্তা কিনে॥
চর্ব্য চূষ্য লেহ্য পেয় প্রচুর প্রচুর।
আয়োজন করিলেন ভক্ত শ্ৰীমথুর॥
সপ্তাহ কাটিয়া যায় কাঙালী-ভোজনে।
দেখিয়া ঠাকুর মহাপরিতোষ মনে॥
অর্থসহ নব বস্ত্র শেষ দিনে দান।
পশ্চাৎ হইল কাশীতীর্থেতে পয়ান॥