প্রথম খণ্ড - কালীপূজা ও রমণীর বেশধারণ
২
গ্রামেতে পুরুষ-নারী বালক কি বালা।
যার যেন সাধ তার সঙ্গে তেন খেলা॥
রঙ্গ বহু বিশেষতঃ নারীদের সনে।
প্রভুরও রমণী-ভাব ষোল আনা মনে॥
ফুটে মুখে মিঠা বাণী রমণীর প্রায়।
প্রকৃতিসুলভ ভাব কান্তিমাখা গায়॥
পরিচয়-হেতু কথা শুন শুন মন।
অপরূপ প্রভুর বাল্য-বিবরণ॥
গ্রাম্য রমণীরা প্রভুদেবে এত 'বাসে।
না দেখিতে পেলে পরে ঘরে খুঁজে আসে॥
বয়স ক্রমশঃ বেশী, নহে পূর্বতন।
কৈশোরে প্রবেশ তায় ছিয়ালা-গড়ন॥
কুলবতী-পক্ষে লজ্জা কুলের তরাস।
শ্রীপ্রভুর সঙ্গে করে রঙ্গ-পরিহাস॥
সরম না আসে মনে, যত কুলবতী।
প্রভুরে দেখিত তারা তাহাদের জাতি॥
দিবানিশি তাই খেলা সকলের সনে।
যুবক বালকবৎ বাল্যলীলা শুনে॥
সুবর্ণবণিক জেতে গ্রামেতে বসতি।
সেই বংশে চৌদ্দ বোন সবে রূপবতী॥
ভগিনীগণের মধ্যে প্রধানা রুক্মিণী।1
অদ্যাপিহ বর্তমানা তাঁর মুখে শুনি॥
শ্রীপ্রভুর প্রতি হৃদে ভালবাসা ভরা।
নহেন একাকী, ঘরে যত সহোদরা॥
প্রভু-দরশন হেতু এত লুব্ধ মন।
গ্রামত্যাগাপেক্ষা ভাল বুঝিত মরণ॥
শ্বশুরের ঘর তাই যাওয়া নাই হ'ত।
প্রভু-দেবে তারা সবে এতই 'বাসিত॥
কেবা তাঁরা শ্রীপ্রভুরে এত 'বাসে প্রাণে।
মহামতী ভাগ্যবতী প্রণতি চরণে॥
সাধ্য কার স্বরূপত্ব করিবে প্রকাশ।
মূর্খ মূঢ়মতি করি পদরজ আশ॥
অতি রূপবান প্রভু নবীন বয়েস।
ধরি অঙ্গে অপরূপ রমণীর বেশ॥
দেশের চলন যেন মোটা আভরণ।
শিরে ধরা বেণীগুচ্ছ বাঁধা সুশোভন॥
পরিয়া কাপড় বড় পাড় পরিপাটি।
আবরণ শ্রীবদন যান গুটি গুটি॥
প্রকৃতি-সুলভ হাবভাবে অঙ্গভরা।
কে পারে চিনিতে সাজা রমণী-চেহারা॥
পুরুষেরা চিনে পাছে এই শঙ্কা ক'রে।
খিড়্কি দিয়া ঢুকিতেন, বেনেদের ঘরে॥
ধরা বেশ ঠিক যেন রমণীর প্রায়।
আবরণে কোনক্রমে চেনা নাহি যায়॥
নানা রঙ্গ করি প্রভু, ধরা দিলে পরে।
যত বোন হয় খুন হেসে হেসে মরে॥
দেবেশ-দুর্লভ যে প্রভুর দরশন।
যোগেশ আশায় করে দুস্তর সাধন॥
মহেশ প্রমত্ত-চিত-মাত্র নামে যাঁর।
বিরিঞ্চি-বাঞ্ছিত পদ সেব্য কমলার॥
নারদাদি শুকদেব যত ঋষিগণ।
সতত যাঁহার করে মহিমা-কীর্তন॥
আগম নিগম তন্ত্র বেদ গীতা আদি।
না ফুরায় স্তোত্র গায় চিরকালাবধি॥
বেদ-বিধি তপ-জপ সাধনার পার।
ক্রিয়া-কাণ্ড লণ্ডভণ্ড আশয়ে যাঁহার॥
কোন মতে কোন পথে নাহি মিলে যাঁরে।
সেজন সুলভ এত কামারপুকুরে॥
ভক্তি-ভক্ত-ভাব নাহি গ্রামবাসী-সনে।
তাদের গদাই, তারা এই মাত্র জানে॥
এখানে কেবল দেখি স্নেহের সম্ভাষ।
প্রভুতে ভক্তির কথা, কথা উপহাস॥
ভগ্নীগণে নানাবিধ খাইবারে দিত।
দোলনা বাঁধিয়া ঘরে তাঁরে দোলাইত॥
বাড়িতে যতেক নারী বসি একত্তর।
শুনেন কতই কথা কন গদাধর॥
বীণা জিনি কণ্ঠস্বর শুনিয়া সঙ্গীত।
আনন্দ-তুফানে হয় সবে বিমোহিত॥
তুফান-সঙ্গিনী উচ্চ কলকল নাদ।
অরসিকজনে গণে কানে পরমাদ॥
1. বর্তমানে তিনি স্বর্গগতা - প্রঃ↩