দ্বিতীয় খণ্ড - বিবাহ
৩
বিবাহের সব কথা করি স্থিরতর।
রামেশ্বরে পাঠাইয়া দিলেন খবর॥
পুলক অন্তর তেঁহ শুভ সমাচারে।
দিন করি স্থিরতর কুটুম্বের ঘরে॥
পাঠাইল নিমন্ত্রণ লিখন করিয়া।
আই ঠাকুরানী কন ঘরে ঘরে গিয়া॥
প্রতিবাসী নর-নারী খুশী অতিশয়।
সর্বাধিক খুশী প্রভু হবে পরিণয়॥
আনন্দসাগরে ভাসে গ্রামের রমণী।
মহানন্দে আত্মহারা আই ঠাকুরানী॥
মেজ ভাই রামেশ্বর বনিতা তাঁহার।
প্রভুরে দেখেন যেন পুত্র আপনার॥
বড় সাধ বিবাহেতে হয় বাদ্য-ঘটা।
দৈবক্রমে কিন্তু না ঘটিয়া উঠে সেটা॥
ঘরে ঘরে প'ড়ে গেল আনন্দের ধুম।
রাত্রিকালে কারো চোখে নাহি আসে ঘুম॥
ক্রমে বিবাহের দিন হৈল উপনীত।
প্রতিবাসী রমণীরা সবে উপস্থিত॥
পরম সুঠাম প্রভুদেবে সাজাইতে।
কেহ বা চন্দন ঘষে কেহ মালা গাঁথে॥
যতনে রচনা কৈল বেশ মনোহর।
মন হরে হেরে পরা সুন্দর কাপড়॥
গ্রাম্য রমণীরা করে মাঙ্গলিক ধ্বনি।
আহ্লাদে কাঁদেন মেজ ভাজ-ঠাকুরানী॥
বাদ্য-ঘটা না হইল বড় দুঃখ মন।
অন্তরেতে বুঝিলেন প্রভু নারায়ণ॥
সান্ত্বনা-কারণ তবে বলিলেন তাঁয়।
দেখ শুন কিবা বাদ্য বাজিছে বিয়ায়॥
এত বলি দেন মুখে বোল পরিপাটি।
ডেলে গু ডেলে গু ডেলে ডেলে কাটি॥
ঢোলের স্বরূপ হাতে পাছা বাজাইয়া।
বাজান ডোমের বাদ্য নাচিয়া নাচিয়া॥
মহারঙ্গকর প্রভু অতুল ভুবনে।
নকলে সুপটু হেন নাহি শুনি কানে॥
বাদ্যাপেক্ষা রঙ্গাধিক প্রভুর বাজন।
নাড়ী ফাটে হেসে লুটে দর্শকের গণ॥
কোনই সরম লজ্জা নাহি শ্রীপ্রভুর।
সরল সহজ সোজা গদাই ঠাকুর॥
বিবাহেতে লজ্জাহীন যত হ'ক নর।
তথাপি সলজ্জ বাহ্যে জড় জড় স্বর॥
প্রভুর দেখহ লজ্জা-গন্ধ-মাত্র নাই।
বুঝিতে এসব কথা বাল্যভাব চাই॥
চাই দিব্য মুক্ত খোলা সরল নয়ন।
সরল বিশ্বাস আর হরিলুব্ধ মন॥
সুসরল মন স্বচ্ছ স্ফটিকের প্রায়।
তার মধ্য দিয়া যত লীলা দেখা যায়॥
যদ্যপি কালিমা ম'লা মনে গিয়া ধরে।
আজন্মে বিগত হয় আঁধারে আঁধারে॥
ভাঙিয়া দিতাম কথা কলমেতে আঁকি।
যত কব তিলমাত্র সব রবে বাকি॥
শ্রীপ্রভুর লীলাকাণ্ড অপরূপ খনি।
পূর্ণিত সজ্জিত তায় নানা রত্ন-মণি॥
কথার এ কথা নয় কর দরশন।
নীরবে লইয়া সঙ্গে সুসরল মন॥
রঙ্গে মাতি বরযাত্রী জুটিয়া সকলে।
আগে পাছে শ্রীপ্রভুর বিয়া দিতে চলে॥
শুনা কথা শিবের বিবাহ মনে পড়ে।
উমা সহ যেইবার অচল-আগারে॥
বিয়া দিতে যত ভূতে মহা মেতে চলে।
যেতে পথে নানা মতে জাতি-খেলা খেলে॥
মহারঙ্গী নন্দী ভৃঙ্গী ভৈরব বেতাল।
দৈত্যদানা ধূর্তপনা ধরা আলথাল॥
ছুটাছুটি হুটপটি মাটি ফাটে দাপে।
মহাফণী ত্রস্ত প্রাণী কোটি শিরে কাঁপে॥
ভূতদলে আলো জ্বালে মুখের ভিতর।
চারি ধারে যায় ঘেরে ষাঁড়ে দিগম্বর॥
সেইমত বরযাত্রী শ্রীপ্রভুর সাথে।
খোলা পায় খোলা গায় ঠেঙা লাঠি হাতে॥
গামছা কাঁধেতে বাঁধা কোমরে চাদর।
কৌতুক রহস্য মুখে হাজার রগড়॥
যেতে পথে কত রঙ্গ কব আমি কটি।
উতরিল সন্নিকটে জয়রামবাটী॥