দ্বিতীয় খণ্ড - অনুরাগে কালীদর্শন
৪
কোনদিন বিল্ব-জবা দিয়া মার পায়।
কাঁদেন আকুল-প্রাণ ডাকিয়া শ্যামায়॥
কোনদিন মা মা রব কাতরে কাতরে।
অবিরল আঁখিজল ধারা বেয়ে ঝরে॥
কোনদিন কর জুড়ি জানু পাতি ভূমে।
কাঁদিয়া প্রার্থনা কত শ্যামা-সন্নিধানে॥
নাহি চাহি লোক-খ্যাতি প্রতিপত্তি ধন।
না চাই সিদ্ধাই অষ্ট অনর্থ ভীষণ॥
লে মা তুই অহঙ্কার অজ্ঞান গেয়ান।
লে মা তুই ভাল মন্দ মান অপমান॥
লে মা তুই যত কিছু আছয়ে আমার।
দে মা ভক্তিসহ তোর শ্রীচরণ সার॥
অহংবুদ্ধি অহঙ্কার যাবে কোন্ দিন।
দীনাপেক্ষা দীন হব হীনাপেক্ষা হীন॥
কিরূপে করিলা প্রভু দীনতা-সাধন।
গাইলে শুনিলে করে তম-বিনাশন॥
পুরীতে অতিথিশালা মহাপরিসর।
প্রচুর ভাণ্ডারা তথা বন্ধনী সুন্দর॥
ভক্তিমতী যেন রানী তেমতি উদার।
অতিথি সন্ন্যাসী নাগা হাজার হাজার॥
গণনায় নাহি পায় কত আসে যায়।
ছত্রে খায় কত লোক দুপুরবেলায়॥
যতেক উচ্ছিষ্ট পাতা তারা যায় ফেলে।
শ্রীহস্তে একত্র করি শিরোপরি তুলে॥
গঙ্গাকূলে ফেলিতেন শ্রীপ্রভু আপনি।
পশ্চাৎ মার্জন ঠাঁই ধরিয়া মার্জনী॥
লম্বে প্রস্থে মস্ত পুরী বৃহৎ আকার।
প্রত্যূষের পূর্বে প্রতিদিন পরিষ্কার॥
নিঃশব্দে করম তাঁর গোপনে গোপনে।
কে করেন পরিষ্কার কেহ নাহি জানে॥
দেখে প্রাতে লোকে লাগে অপার বিস্ময়।
দেব কি দৈত্যের কর্ম নানা কথা কয়॥
কহিতে প্রভুর কথা হৃদয় বিদরে।
সহিলা অসহ্য কত জীবের উদ্ধারে॥
কেবা সে পাষাণ প্রাণ শাস্ত্রমধ্যে কয়।
অশনি হইতে শক্ত হরির হৃদয়॥
শীতলত্ব কত ধরে ফটিকের জল।
কোমলত্বে অতি তুচ্ছ কমলের দল॥
সুলভত্বে এতই সহজ সেই হরি।
নাহি ধারে কোন ধার বরষার বারি॥
করুণার পরিণামে যায় রসাতল।
সপ্তদ্বীপ-সুবেষ্টিত সাগরের জল॥
উজ্জ্বলত্বে কান্তি কিবা আছে তুলনায়।
কোটি কোটি দিনমণি বানে ভেসে যায়॥
মমতায় নাহি পায় মায় কোন ঠাঁই।
এতই আত্মীয় তিনি জগৎ-গোসাঁই॥
এই পূর্ণ কলিকাল কলির প্রতাপে।
পূর্ণিত মানুষ-হৃদি মহা মহা পাপে॥
দিবারাত্র করে নৃত্য হৃদে অহঙ্কার।
মরে তবু নতশির নহে হইবার॥
কামিনী-কাঞ্চনে মত্ত আসক্তির দাস।
অধর্ম-আচারী আত্মসুখ অভিলাষ॥
বাঁকা আঁখি ঢাকা তায় মহা-আবরণে।
পথছাড়া কুলহারা কুকর্ম-কারণে॥
রূপমুগ্ধ পোকা যেন নরকে তেমন।
হেন অন্ধ বদ্ধ জীব উদ্ধার-কারণ॥
নরদেহধারণ করিয়া ভগবান।
নিজে সাজি দীন হীন জীবেরে শিখান॥
অতঃপর কি হইল শুন শুন মন।
কল্যাণ-নিদান-কথা শান্তিনিকেতন॥