Prev | Up | Next

দ্বিতীয় খণ্ড - অনুরাগে কালীদর্শন

পূজায় বড়ই রঙ্গ দিনে দিনে বাড়ে।
ভক্তি-প্রদায়িনী কথা শুন ভক্তিভরে॥
সচন্দন বিল্ব-জবা দিতে শ্যামা-পায়।
থুইতেন প্রভুদেব নিজের মাথায়॥
শ্যামার সেবার হেতু যত আয়োজন।
ভাবাবেশে করিতেন আপুনি ভক্ষণ॥
একদিন প্রভুদেব যেন শুনা যায়।
খাইবারে বড় জেদ করেন শ্যামায়॥
জনেক দাঁড়ায়ে পাশে প্রভুদেবে কন।
পাষাণমূরতি শ্যামা জড় অচেতন॥
অকারণ কেন জেদ কর খাইবারে।
শুনিয়া আবেশ অঙ্গে, বাহ্য গেল ছেড়ে॥
শ্রীমুখমণ্ডলে হাসি অপরূপ খেলে।
আবেশে অবশ অঙ্গ পড়ে ঢলে ঢলে॥
ধরিলেন তুলা লয়ে শ্যামার নাসায়।
দুলু দুলু কাঁপে তুলা নিঃশ্বাসের বায়॥
পুনরায় মহাজেদ করিতে ভক্ষণ।
সম্মুখে সাজান ভোজ্য বিবিধ রকম॥
হাতে করি দিতে ভোজ্য বদনে শ্যামার।
ভোজ্যসহ হাত আসি পড়ে মুখে তাঁর॥
শ্যামার নৈবেদ্য কভু ভাবের বিহ্বলে।
স্বহস্তে তুলিয়া দেন খাইতে বিড়ালে॥
কখন কখন ভাবে বিভোর হইয়ে।
নৈবেদ্যের নিবেদন পূজা না করিয়ে॥
কখন আবেশভরে কহেন ফুকুরি।
রোস্ রোস্ খাবি আগে নিবেদন করি॥
কখন কহেন মৃদু-হাস্য-সহকারে।
ওমা তুই আগে খা গো আমি খাব পরে॥
কখন সেবার পরে শ্যামা-গুণগান।
ভাবেতে বিভোর নাহি বাহ্যিক গেয়ান॥
শ্যামার মন্দিরে আছে খাট একখানা।
মশারি বালিশ গদি মায়ের বিছানা॥
কখন কখন প্রভু ভাবাবেশে গায়।
শুয়ে বসে থাকিতেন শ্যামার শয্যায়॥
পুরী-মধ্যে যতেক ব্রাহ্মণ এই হেরে।
বিদ্বেষ করিয়া কত লাগায় মথুরে॥
মথুর উত্তর দিতে দেখিয়া ব্যাপার।
তাঁহারে কহিতে শক্তি নাহিক আমার॥
শ্যামার হয়েছে কৃপা তাঁহার উপরে।
যাহা ইচ্ছা করিবেন পুরীর ভিতরে॥
বহুপুণ্যবলে আমি পাইয়াছি তাঁয়।
বাঁচিব যতেক দিন রাখিব মাথায়॥
এতেক শুনিয়া বুঝে পুরীর বামুন।
প্রভু করেছেন কিছু মথুরেরে গুণ॥
সাধন-ভজন কত গোপনে গোপনে।
করেন শ্রীপ্রভুদেব কেহ নাহি জানে॥
সাধন-ভজন-জন্য আঙ্গিক বিকার।
না বুঝিয়া লোকে-জনে কহে পীড়া তাঁর॥
যোগজ বিকার অঙ্গে কতরূপ হয়।
পীড়া ব্যাধি সাধারণে নানাবিধ কয়॥
বয়োজ্যেষ্ঠ খুল্লতাত-ভাই হলধারী।
পণ্ডিত সাধক ভক্ত পুরীতে পূজারী॥
বৈষ্ণবের মতে পথে শ্রদ্ধা বিলক্ষণ।
বেশ্যাসহ পরকীয়া প্রেমের সাধন॥
সিদ্ধবাক কাছে কেহ কিছু নাহি কয়।
পাছে দেন অভিশাপ এই মনে ভয়॥
নির্ভীক শ্রীপ্রভু তাঁয় কহিলা তখন।
কি বলিয়া দশে করে কলঙ্ককীর্তন॥
কোপে শাপ দিলা দাদা প্রভু-গুণধরে।
যে মুখে কহিলা তাহে রক্ত যেন ঝরে॥
কি এক সাধনা প্রভু করেন তখন।
সিদ্ধান্তে বদনে হয় শোণিত-মোক্ষণ॥
শিমের পাতার রসে বরণ যেমতি।
সেইরূপ শোণিতের বরণ প্রকৃতি॥
বিষণ্ণবয়ান প্রভু কন সকাতরে।
শাপ দিলে দেখ দাদা মুখে রক্ত ঝরে॥
সজল নয়নে তবে কহে হলধারী।
কুকর্ম করেছি ভাই অভিশপ্ত করি॥
জানে না বুঝে না দাদা মায়ের কৌশল।
প্রভুর হয়েছে শাপে পরম মঙ্গল॥
যোগজ দূষিত রক্ত না হলে বাহির।
থাকিত না ঠাকুরের বিগ্রহ-শরীর॥
পরে পরে পাবে মন কত পরিচয়।
যোগজ বিকার কত সাধনাতে হয়॥

Prev | Up | Next


Go to top